পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষদের কথা



পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষদের  

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠি  ॥




মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী 

শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সমীপে , 

সারা বিশ্বের সাথে ভারত করোনা ভাইরাসের প্রকোপে  জর্জরিত। ভারত করোনাকে জয় করতে পারবে আশা করছি । করোনার প্রকোপ থেকে  আপনি  পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে যে ভাবে বাঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা করছেন তা এক কথায় অভূতপূর্ব। এই করোনা ভাইরাস জন্য ভারতসহ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিতে ব্যাপকভাবে ধাক্কা খেয়েছে। গত বছর  রাস্তায় নেমে আপনি আমাদের দিশা দেখিয়েছেন কিভাবে করোনা থেকে দূরে থাকা যায়। ঠিক করোনার মতই পশ্চিমবঙ্গে দুটো ঢেউ আছড়ে পড়েছে । গত বছরে আম্ফান , এ বছরের ইয়াস । গত বছরে শুধুমাত্র সমুদ্র উপকূল অঞ্চল গুলোতেই আম্ফান আছড়ে পড়েছিল । এবছর শুধু সমুদ্র উপকূলবর্তী নয় রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ইয়াস আছড়ে পড়েছে । মানুষ ঘরছাড়া , গ্রাম ছাড়া , বহু জায়গায় এখনও বাঁধের জল নামেনি । ক্ষতিগ্রস্ত এই সমস্ত মানুষের সাথে জড়িয়ে আছেন পর্যটনশিল্পের মানুষেরাও । দীঘা, মন্দারমনি, তাজপুর , লাল কাঁকড়া বীচ , মৌসুমী আইল্যান্ড ,বিস্তীর্ণ সুন্দরবন অঞ্চল, পুরুলিয়ার অযোধ্যা , সীতারামপুর , উত্তরবঙ্গের কিছু কিছু অঞ্চলে  গত লকডাউন এর পরেও মানুষ গিয়েছিলেন ভ্রমণে । ইয়াশ এর পর এই অঞ্চলগুলোতেই ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি  হয়েছে । আমরা জানি দীঘা, মন্দারমনি ,তাজপুরকে আপনি সাজিয়ে দেবেন । 

           পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে ট্রাভেল এজেন্টরা। এরাই হোটেল বুকিং করেন ,গাড়ি বুকিং করেন , বিমানের টিকিট করেন, ভ্রমণে নিয়ে যান । পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছেন  কয়েক লক্ষ মানুষ । এই মানুষেগুলোর সাথে আবার জড়িয়ে আছে তাদের পরিবার।  গত দু'বছর ধরে তারা কর্মহীন ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। 

দেশে কর্মসংস্থানের সঙ্গে এই পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত আছেন ৮.১ শতাংশ মানুষ। পর্যটনের সাথে যদি পর্যটনের অনুসারী শিল্প কে যুক্ত করা তাহলে এই সংখ্যাটা আরো বেড়ে যাবে ।  

                দেশের অর্থমন্ত্রক বিভিন্ন শিল্পের জন্য, বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে বিনিয়োগের কথা বলেছেন,  কিন্তু এখন পর্যন্ত পর্যটন শিল্পের জন্য কোন রকম আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি । ভারতবর্ষের অর্থনীতি এবং পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিতে পর্যটন শিল্প অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। গত ২ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১৬ লক্ষ ১৭০০০। আপনি আমাদের বলেছিলেন, পর্যটন বান্ধব পরিবেশের  কথা। সেভাবেই  রাজ্যে অনেক  ছোট ছোট সুন্দর পর্যটন স্থল গড়ে উঠেছে । আপনার প্রচেষ্টায় 2016 সাল থেকে  বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে এই রাজ্য স্থান করে নিয়েছে । আপনার জন্যই  বিদেশি পর্যটক এবং বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটকরা পশ্চিমবঙ্গে ভীষণভাবে ভিড় করছেন। এটা আপনার সাফল্য এটা আমাদেরও সাফল্য । ২০১৮  হিসেবে  শুধুমাত্র পুজোর সময় পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩  হাজার বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের গর্ব  দার্জিলিং ,পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সুন্দরবন ,পশ্চিমবঙ্গের গর্ব  ডুয়ার্স ,দীঘা, মন্দারমনি তাজপুর,  ঝাড়গ্রাম,  মুর্শিদাবাদ, মালদা , শান্তিনিকেতন ইত্যাদি । 

কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের হিসেব বলছে, ২০১৮ জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গোটা দেশের মোট বিদেশি পর্যটকের পাঁচ শতাংশ কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে ভারতে এসেছেন।  ২০১৮ সাল থেকে যা বেশ খানিকটা বেশি। অ্যাপ ক্যাব সংস্থা উবের ও জানাচ্ছে, কলকাতায় তাদের বিদেশি যাত্রী বেড়েছে।

উবের 'হাউ ইন্ডিয়া মুভড ইন ২০১৯' শীর্ষক এক সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে - সারা দেশের পাঁচটি শহরে উবের সর্বাধিক বিদেশি পর্যটক পেয়েছে। এই তালিকায় আছে কলকাতার নাম।   

      পর্যটনশিল্পের সাথে  জড়িয়ে থাকা এই  মানুষ গুলো আপনার কাছে আবেদন করছে , আপনি আমাদের পথের দিশা দেখান। আমাদের কাছে যেটুকু গচ্ছিত যা অর্থ ছিল তা সব  শেষ হয়ে গেছে।  আমরা সংসার চালাতে পারছি না ।   এপ্রিল মে জুন মাসের ভ্রমণের জন্য আমরা আমাদের গচ্ছিত মূলধন থেকে বিমানের টিকিট এবং রেলের টিকিট কেটেছি , বিভিন্ন হোটেলকে , গাড়িকে অগ্রিম টাকা পাঠিয়েছি । ট্রাভেল এজেন্ট এর হাতে কানাকড়ি পর্যন্ত নেই।  হোটেল ব্যবসায়ীরা তাদের লিজ মানি দিতে পারছেন না। ট্যুরিজম এর সাথে যুক্ত  সমস্ত গাড়ির মালিকরা  তারা ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারছেন না। দুবছর ধরে কোন কাজ নেই ।

       আমাদের সাথে আগামী এক বছর করোনার ভয়ে ভ্রমণ মানুষ ভ্রমণ করতে যাবেন না কিনা সন্দেহ আছে । কয়েক লক্ষ মানুষ কর্মহীন । তাঁরা পরিবার চালাব কি করে ? ওষুধের পয়সা , গ্যাস , ইলেকট্রিক সিটির  টাকা কোথা থেকে জোগাড় করব ? এই বিশ্ব বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাদের লড়াই করবার কোন জায়গা নেই। আমরা চাই আপনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান । আমরা আপনার সহযোগিতা প্রার্থনা করি।   


বিনীত 

বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় । 

ট্যুরিজম সাথে জড়িয়ে থাকা একজন কর্মী  । 

৯৪৩৩১১০০৪৮`।

মন্তব্যসমূহ

  1. দারুন একটা সত্যি কথা লিখেছো ।

    উত্তরমুছুন
  2. আমি ও আমার পরিবার ভ্রমণ পিপাসু,কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও করোনা অতিমারীর প্রকোপ সব আশা ত্যাগ করতে হয়েছে।
    কিন্তু,আমাদের ভ্রমণ সহায়ক বন্ধুদের কি হবে,,বিগত দু বছর কোনো কাজ নেই ওদের এটাই বাস্তব।বড়ই অসহায় অবস্থায় আছেন ওরা।শুধু আমাদের দেশেই নয়,সমগ্র বিশ্বে পর্যটন মানচিত্রে নেমে এসেছে কালো ছায়া।
    পর্যটন এর সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত প্রচুর অনুসারী ব্যবস্থপনা আছে।
    বিভিন্ন প্রদেশের ভ্রমন সংস্থা গুলি সরকারি ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা পেলে ওরা আবার ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করবেন নিশ্চয়ই।
    এ তাগিদ বাঁচার ,এ লড়াই অস্তিত্বের।
    সকল শুভানুধ্যায়ীর শুভেচ্ছা পাথেয়।
    সার্বিক শুভ কামনা করি।

    উত্তরমুছুন
  3. পর্যটন শিল্পের যাঁরা ব্যবসায়ীক ভাবে জড়িত তাঁরা একজোট হয়ে মিডলম্যান বর্জন করুন। তাতে পরিসেবা উন্নত হবে। আপনারাও সঠিক মূল্য পাবেন।

    উত্তরমুছুন
  4. Middleman বা প্রচলিত দালাল বা commission agent ছাড়া বিভিন্ন জায়গার হোটেল,গাড়ি,guide ইত্যাদি বুক করতে খুবই অসুবিধে হয়,তাই দেশে বা বিদেশের ভ্রমণে ওদের ছাড়া সুষ্ঠ ভাবে tour programme পরিচালনা করা যায় না।
    আমার ব্যক্তিগত অভিমত,অন্যদের সাথে না ও মিলতে পারে।

    উত্তরমুছুন
  5. এটা বাস্তব সত্য। এই পর্যটন শিল্পের সাথে প্রচুর মানুষ জরিয়ে আছে। বর অসহায় অবস্থা আজ ওদের। মানুষের ভবিষ্যত কি হবে কেউ জানে না। প্রার্থনা করি সব দুর্যোগ যেন তাড়াতাড়ি কেটে যায়। সবাই কাজ কর্ম করে সুষ্ঠু জীবন যাপন করুক।

    উত্তরমুছুন
  6. খুব দ্রুত এই অসহায় পরিস্থিতির শেষ হবে এই কামনা করি। তবে পর্যটন শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষগুলোর কথা সরকারের অবশ্যই ভাবা উচিৎ।

    উত্তরমুছুন
  7. খুবই প্রয়োজনীয় এবং সময়োপযোগী আবেদন। যে আবেদন শুধু প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে থাকা মানুষের জন্য নয়। সারা রাজ্য তথা দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্যের প্রস্নেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। পর্যটনের শিল্পের মত সমৃদ্ধ পরিবেশ বান্ধব শিল্পের উন্নতি এবং প্রসারে সরকারের অবশ্যই অনেক সু পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন ---- দেশের সংস্কৃতির প্রস্নেও।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রামায়ণের পথে শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ

কল্পা কিন্নর হিমাচল প্রদেশ

ইতালির কলোসিয়াম