ডুয়ার্স স্বপ্নময় কাব্য ।
আমার ডুয়ার্স স্বপ্নময় কাব্য ।
বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় ॥
এখানে আকন্দ ফুল আছে , চন্দন নেই ! ঘষে যাওয়া কাঁচের মতো জল আছে , শুধু সে নেই ! কে এনে ছিল তাকে? অফুরন্ত মাদকতা নিয়ে বেড়ে ওঠা সুবর্ণলতা নেই , নেই বলতে নেই রাজ্যের অনেক চতুরতা l এখানে কোন নাবিক আসেনি ভাঙা নৌকা নিয়ে l আকাশে পাহাড় আছেন , তাও দুরে ! ড্রাগন দেশে l হিমালয় পর্বত l দূরে ডাকছেন আয় আয় কোন এক দুয়ার ধরে স্বস্তির মত পাওয়া যাবে l আমি ই একটা নৌকা এনেছি l আঁকা বাঁকা উড পেন্সিলে আঁকা l ক্লাস ফোরে বাবার স্কুলে পড়ার সময় কোন এক সহ পাঠীর খাতায় এই নৌকাটা আমি দেখেছিলাম l আজ সে ডুয়ার্সের জঙ্গল নদীতে ভেসে l আমি তাকে নিতে এসেছি এক চিলতে রোদ্দুর থেকে l হলং আমার পাশে এক অঙ্গৃরিয় জলের মতো l এখানে জলের মধ্যে মেঘ ভাসে , আমরা নৌকা ভাসে না l তোমায় নিয়ে আসব শাল সেগুন আর শিরিষ গাছের জঙ্গলে । চায়ের পাতায় । ছিপ নিয়ে বসে আছি মূর্তি নদীতে l ভাবনারা ধরা দেবে মাছের আকারে l অন্ধকার স্ফুলিঙ্গ , আদি অনন্ত l সে আমায় বলেছিল তিস্তা আমার প্রিয় নদী l আমি তার জন্য জঙ্গলের আঁচলে বেঁধেছি কাজল কালো তিস্তাকে l কে আমায় এনে ছিল নদীর ধারে ? আকাশের মেঘ বালিকা ? নাকি লিস ও হিস নদী বালিকারা ? আমার নৌকা এখন খয়ের গাছে বাঁধা l সাদা মোজা পরা মোষ যাকে বাইসন বলি তার ইতালিয় নীল চোখ আমায় ডাকছে যাবি নাকি রিয়েল মাদ্রীদ ?
জঙ্গলের বুক চিরে নদী |
মেঘের রেশম কেটে পশম পথে ঘুরতে ঘুরতে , ঋষিতে এসে ঠেকলো আমার যাত্রা পথ l এই নদী এই পাহাড় সবাই যেন আমার , নদীর মধ্যে পাহাড় না কি পাহাড়ের মধ্যে নদী ? না আমি জানি না l আমি জানি এই নদীটাকে আজ আমি নিয়ে যাব l উপহার দেব তাকে যে কোন দিন নদী দেখেনি l
ডুয়ার্স আসার আগে সে নিজেই ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছিল বন্য । এক মাস হল বিয়ে করেছে । ডুয়ার্সে আশা নিয়ে ভেতরে ভেতরে একটা টেনশন হচ্ছিল ওর । ঝালং বিন্দু রকি আইল্যান্ড গরুর গাড়ি করে মেখলা , জলদাপাড়া ফরেস্ট, গাছ বাংলা রিসোর্ট, রোজই একবার করে এসব কথাগুলো হতে থাকে । বন্য সব সময় ভয় পায় হাতিকে । কিসের ভয় বন্য ? জিজ্ঞেস করলেই বলে হারিয়ে যাবার ভয় । জঙ্গলে যদি হারিয়ে যাই ! মাল স্টেশন থেকে সোজা লাটাগুড়ির বনবাংলা এসে গাড়ি থামলো । ডুয়ার্সের জঙ্গলে বৃস্টি নেমেছে । বিকেলে আমাদের সাফারিতে যেতে হবে । বিকেলে সাফারিতে কিছু পাওয়া মুশকিল । হাতে সময় নেই যেতেই হবে । ডুয়ার্স মানে বৈচিত্রময় প্রকৃতি। এখানে ঘুরতে এলে প্রকৃতির অপরূপ স্বাদ । পাহাড়ি কন্যার মতো মূর্তি নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসেও সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। বন জঙ্গলের বাইরেও রয়েছে আলাদা একটা ডুয়ার্স। যা একেবারেই অন্যরকম! ছবির মতো সুন্দর চা-বাগান। তার পাশেই সংকোশ নদী॥
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছে রেললাইন |
বিয়ের পর প্রথম ভ্রমণ ডুয়ার্স । লাটাগুড়ির জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে অনেক নাম না জানা গাছ খুঁজে পেয়ে যায় । রাতে জঙ্গল সাফারি করতে গিয়ে বন্য ভয় পায় । বুকের ভেতরে কেমন একটা করতে থাকে।জঙ্গলের ভেতর থেকে দুটো চোখ জ্বলজ্বল করছে,ওটা কি? মহাকাল মন্দির থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বলে । জঙ্গলের গভীর ঘ্রাণ আর শরীরের মধ্যে ঢুকে পরে । একটা ঘ্রাণ থেকে উঠে আসে আর একটি ঘ্রাণ। ডুয়ার্সের জঙ্গলে পূর্ণিমার রাত্রি ! এতো প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতি !
আজ সাফারি করে সবাই ক্লান্ত। কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পরা। নাকে একটা গন্ধ আসে । জঙ্গলে হাতি বের হতে পারে বা অন্য কিছু আসতে পারে । চারিদিকে চা বাগানে ঘেরা রিসর্টটি । এর আগেও একবার অলীক এসে এই রিসর্টে উঠেছিল । বৃস্টি একটু থেমেছে । অন্ধকার স্ফুলিঙ্গ আদি অনন্ত , এক কী অসীমে দ্বন্দ্ব ।
হলং নদী |
সকাল থেকে আকাশ একটু গম্ভীর । চা গাছের সবুজ পাতাগুলো কালচে হয়ে গেছে । দূরে চা গাছের মাথাগুলো নড়ে উঠছে । খয়ের বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না তবু যেতে হবে বন্যর জন্য । কাল অনেক গুলো বাইসন দেখছি । বাইসন আর মহিষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? বাইসন সব সময় মোজা পড়ে থাকে । দেখেছি কারণে-অকারণে সবসময় মোজা পড়ে থাকে । জোঁকের ভয়ে মোজা পড়ে থাকে । জলঢাকা নদী, আপেল পাহাড়, ভুটানের গ্রাম , জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যাওয়া রেল লাইন ।সকালে মূর্ত্তি নদী স্নানকরবো । এবার সেখান থেকে ঝালং ভিউ পয়েন্টে। নিচে বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী। তার পরেই ঝালং গ্রাম। ভারত ও ভুটান এর সীমান্তের গ্রাম বিন্দু। সেখানে জলঢাকা নদীর উপর বিন্দু ব্যারেজ। নদীর পাশ দিয়েই ওপারে উঁকি দিচ্ছে ভুটানের নাম না জানা গ্রামগুলি। ফেরার সময় রকি আইল্যান্ড। এবার ফিরে আসব রিসর্টে।
বুনো বাংলায় নেমে আসে অন্ধকার |
আজ সারা দিনে অনেক গুলো ঘটনা ঘটে গেলো । জলঢাকা ব্যারেজের ছবি তুলতে গিয়ে জলে পড়ে যায় মোবাইল । বৃষ্টি ভেজা দিনে গরম কফি খেতে গিয়ে জিভ পুড়ে গেছে । বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরের আগে যা-কিছু পরিবেশ তৈরি হয় তার সবকটি লক্ষণীয় দেখা দিয়েছে শরীরে । সাহা দা বরাবর বলে ছিল বেশি রাত করবেন না। মহাকালের কাছে রোজ হাতি বের হচ্ছে । গাড়ি যখন ফিরল সকলের কফি শেষ হয়ে গেছে ।
খয়ের বাড়ির বা |
তখনও পাখিরা মনে হয় ঘুম থেকে উঠেনি । অন্ধকার তখনও বিদিশার নিশা হয়নি । একটা গঙ্গাফড়িং কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেলো । কিলবিল করা সাপের বিষের চেয়েও অন্ধকার গ্রাস করছে । ভাঙা মাস্তুল আর আতস কাঁচের দূরবীন দিয়ে কতো দ্বীপে আমি দেখছি সভ্যতার অন্ধকার । আজ এই অন্ধকার আমার কাছে নতুন । জঙ্গল উঁচু নিচু অন্ধকারে হরিণের পায়ের শব্দ আমি শুনেছি । নিশুতি রাতে ঝোরা নদী বুকের ভেতর চেপে বসে ওঠো নামা করেছে। গড়িয়ে পড়া পাথরের টুকরো কখন যে কোন গহ্বরে ঢুকে পরেছে তাকে খোঁজবার চেস্টা করিনি । আজ এই পাহাড়ীয়া উপত্যকায় কালো গাছ গুলো মিশে গেছে আকাশের সাথে । ত্রিস্তর অন্ধকার । নিজেকেই খুঁজে পাচ্ছি না । বাদুড়ের গন্ধ , তেঁতুল গাছ ,তেলাকুচোর পাতা সব ঠেকে গেছে আদি অনন্তের মাঝে । আমি জঙ্গলকে খুঁজি ।আঁতিপাতি করে খুঁজে বেড়াই । হরিণকে এই মাত্র দেখলাম ছুটে পালিয়ে গেল অন্ধকারে । আমার অন্ধকার তোমায় হারতে চাই না । তোমার কোলে আবার জন্ম নেবো অন্ধকার ডুয়ার্স ।
**লেখাটির সব চরিত্র কাল্পনিক **
খয়ের বাড়ির খোঁরা বাঘটা তো
উত্তরমুছুনহ্যাঁ
মুছুনহ্যাঁ
মুছুনঠিক
মুছুনখুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনবেশ পরিপক্ব বর্ণনাময় লেখনী,ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনএত সুন্দর করে বলা, মন ছুঁয়ে গেল।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে
মুছুনআপনার লেখার একটা বাঁধন আছে। খুব ভালো লাগলো যেমন আপনার সঙ্গে বেড়াতে ভালো লাগে। 🙏
উত্তরমুছুনভালো l
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনআপনার লেখায় একটা মাদকতা আছে। আপনার প্রতিটি লেখাই আমার মন ছুঁয়ে যায়।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনচমৎকার!
উত্তরমুছুনখুব ভালো লেখা। বিশেষ করে ভূমিকাটি,যেন মনে হয় কবিতা পড়ছি।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনDarun laglo
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনকোন কথা হবে না দাদা।
উত্তরমুছুন