রামায়ণের পথে শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ
রামায়ণের পথে শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ
বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায়
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; অতিদূর সমুদ্রের 'পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর ।
দারুচিনি-দ্বীপের ভেতরে যাবার আগে জীবনানন্দ দাশের লেখাটা খু্ব মনে পড়ছিল । যাব দারুচিনি-দ্বীপে।
সিগিরি য়া দুর্গ ছবি শ্রীলংকা পর্যটন দপ্তর ।সেটা কোথায় ? সেটা সেই দেশ যেখানে গেলে বুক ভরা শ্বাস নেওয়া যায় । যেখানে মানুষ ইট কাঠ পাথর দিয়ে জঙ্গল করে রাখেনি , সেখানে প্রকৃতি নিজেই সেজে আছে । যেখানে জল খেলে পিপাসা মেটে । মনে হয় নিজের দেশেই আছি , নিজের সাথেই আছি । যে দেশে রজনী নেই সেই দেশেই মানুষ ভিড় করে বেশি । এখানে সকাল আছে , দুপুর আছে রজনী আছে । যাচ্ছি পুরানের পথে যাবার আগে একটু বলি রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ বিদেশ যাত্রা করেছিলেন শ্রীলঙ্কায় ১৯৩৪ সালে । আর সেই দেশের জাতীয় সংগীতটিও তার রচনা । এনিয়ে কেউ কেউ তর্ক করেন । এখানে তর্কের অবকাশ নেই । সেটা ভেঙে দি ।
শ্রীলঙ্কা থেকে আনন্দ সমরকুন ১৯৩০ সালে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে কলা ও সঙ্গীত বিভাগে পড়তে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্র।
১৯৩৮ সালে তিনি গুরুদেবের কাছে তার দেশের জন্য একটি গান লিখে দেবার জন্য অনুরোধ করেন। প্রিয় ছাত্রের এই অনুরোধ ফেরাতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। বাংলায় লিখে দিলেন ‘নম নম শ্রীলঙ্কা মাতা’। সুর করে গানটি তুলেও দিলেন আনন্দকে।
১৯৪০ বিশ্বভারতীর শিক্ষা শেষ করে কবিগুরুর এই গানটি নিয়ে দেশে ফিরে গেলেন আনন্দ সমরকুন। ১৯৪৬ সালে গানটি সিংহলিভাষায় অনুবাদ করে একটি রেকর্ড বের করলেন শ্রীলঙ্কায়।
এই অঞ্চল কাকে বলা হয় অশোক বন ॥ এখন এই জায়গাটার নাম নিউ রেলিয়া ॥১৯৫০ সালে নতুন দেশের জাতীয় সঙ্গীত ঠিক করার জন্য স্যার এডউইন ওয়াসজারএটনির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। এ সময় আনন্দ তার অনূদিত ‘নম নম শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি এ কমিটির কাছে দেন। কমিটি ১৯৫১ সালের ২২ নভেম্বর এই গানটিকেই শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। মোট ৪৪ লাইন আর ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড গানটির সময়সীমা। এভাবেই প্রিয় ছাত্রকে লিখে দেওয়া কবিগুরুর মূল গানটির অনুবাদ হয়ে গেল আরও একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত।
এতো ধান ভাঙতে শিবের গাজন গেয়ে ফেললাম । যাব রামায়ণের পথে । যাব বুদ্ধের পথে । যাবার আগে একটু সমসাময়িক কথা গুলো বলে নিলাম ।
যে দেশে যাবার আগে বানর সেনা সেতু বন্ধন করেছিলেন , যে দেশে সীতাকে হরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পুষ্পক রথে করে । সে দেশটা কেমন । রামের চেয়েও রাবণ টেকনোলজি অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন । রামের হাতে কোন বিমান ছিলো না । তাঁকে বানরসেনার সাহায্য নিতে হয়েছিল । আমরা রাবণের টেকনোলজিতেই প্রবেশ করলাম তাদেরই এয়ারলাইনে ।
আমাদের রামায়ণে রাম যেমন মহান দেবতা তেমনি শ্রীলঙ্কায় রাবণ একজন বীর , দেবতা ও টেকনোলজিতে একনম্বর । শ্রীলঙ্কা সরকার এবং সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করেন রাবণ এখনো শুয়ে আছেন শ্রীলঙ্কার ভূমি তে । রামায়ণের কাল হিসাব কী ভাবে করবো ? করতে হবেই পূরাণের পথে যখন যাচ্ছি সাল তারিখকের হিসাবটা জানা দরকার । কালের হিসাবটা একটু দি॥ যাদব শ্রেষ্ঠ শ্রীভগবান তিনি কেবল নরপতি নয় শ্রেষ্ঠ যাদব। কালান্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। কালের হিসেবটা কি? তার জন্মকালের হিসাবে সময়টা এক হাজার চারশ আটান্ন খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। এই হিসেবটা আধুনিক ঐতিহাসিক কাল গণনা। পুরাণের অষ্টাবিংশ যুগ কলির সান্ধ্যা। কেউ বলেছেন দ্বাপরান্তর । যিশুখ্রিস্টের মত যদি কৃষ্ণ জন্মাব্দ বা কৃষ্ণাব্দ গণনা হতো , তা হলে যীশু জন্মের দুহাজার কুড়ি সালকে বলা হতো তিন হাজার চারশ চুয়াত্তর সাল ।
সীতা আম্মার মন্দির ॥দেখছি , শ্রীরাম ছিলেন দুই হাজার একশ চব্বিশ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তা হলে রামাব্দ ধরতে হয় চার হাজার একশ তেত্রিশ সাল । আর রামের থেকে কৃষ্ণ ছিলেন ছশ ছেষটি বছরের ছোট । আগে রামায়ণ পরে মহাভারত । আমি যে কথা গুলো বললাম তার উৎস কালকূট থেকে নেওয়া । যা পাওয়া গেছে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ও ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর কথা থেকে । এই যে এতো পুরাণের কথা বললাম তার কারণ তো একটা আছে ? শ্রীলঙ্কায় বলা হচ্ছে দশ হাজার বছর আগেকার রাবণের দেহ মমি করে রাখা আছে । কোথায় আছে চলো তার কাছে । বিধি বাম । সেখানে যাবার কোন রাস্তা নেই গভীর জঙ্গলে । ক্যান্ডি থেকে মাত্র ৪০ কি.মি দূরে রঙ্গালয় বলে একটি গ্রাম । সেখান থেকে পাহাড় ও জঙ্গল পেরিয়ে যেতে হবে । রাম রাবণকে বধ করার পর তার দেহ অন্তিম সৎকারের জন্য তার ভাই বিভীষণের হাতে তুলে দেওয়া হয় । রাজা হবার খুশিতে রাবণকে জঙ্গলে রেখে দিয়ে চলে আসেন বিভীষণ। সেই সময় নাগ জাতি রাবণের দেহ তুলে নিয়ে গিয়ে নানা ভাবে রাবণকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা সফলতা না পেয়ে ১৮ ফুট লম্বা ৫ চওড়া বিশেষ বাক্সে ওষুধ দিয়ে রেখে দেওয়া হয় গুহার ভেতরে । নাগমণি সেটি পাহারা দেয় । সাপের ভয়ে সেখানে আর পা রাখেন না কেউ । সারা শ্রীলঙ্কার মানুষ জানেন এখানেই শুয়ে আছেন রাবণ । আমাদের গাইড এই গল্পটা বলার পর নেট ঘেঁটে এই রকমই তথ্য পেয়েছি । সবাই লিখছেন দশ হাজার বছরের কথা । তা হলে দশ হাজার বছর কি কালের ভুল হচ্ছে ? আমি তর্ক করবো না । আমি ইতিহাসবিদ নই আমি এসেছি ভ্রমণ করতে তর্ক করা আমার শোভা পায় না । আমার প্রথম যাত্রা রাবণের বৈমাত্রেয় ভাই কুবের তৈরি বিশাল দুর্গ সিগিরিয়ায় । কলম্বো থেকে সিগিরিয়ায় বাসে যেতে সময় লাগে প্রায় ঘন্টা চারেক । প্রথমবার একটা ছোট গাড়ি করে তিনজন মিলে গিয়েছিলাম । সিগিরিয়া একটা ফ়োর্ট রক ।
রামভোডা ফলস । এখানে হনুমান এসে জল খেয়ে ছিলেন ॥ডিসকভারি চ্যানেলে একবার দেখেছিলাম একসময় এখানে বাস করতো এলিয়ানরা । বলার পেছনে একটা যুক্তিও আছে । একটা সোজা উঠে যাওয়া পাহাড়ে মানুষ কি ভাবে একটা সভ্যতা গড়ে তুলতে পারে ? এই এলিয়ানরাই তো কুবের রাজার বংশ ! উঁচু পাহাড়্চূড়ায় সিংহগিরি বা সিগিরিয়া তে ছিল রাবণের রাজপ্রাসাদ যেখানে পাহাড় কেটে রাবণের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা কুবের তৈরী করেছিলেন এক বিশাল দুর্গ। প্রায় হাজার দেড়েক খাঁড়াই সিঁড়ি ভেঙে সেই পাহাড়ে উঠতে হয়। সিগিরিয়ার প্রাচীন দুর্গটি ভূমি সমতল থেকে ২০০ মিটার আর সমুদ্র তলদেশ থেকে ৩৭০ মিটার উঁচুতে দাম্বুলা ও হাবারানে শহরের মাঝে অবস্থিত। তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে ৪৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই শিলা পাথর বৌদ্ধ মূর্তি ছিল। তারপর ৫ম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রাজা কাশ্যপ পাথরের উপর এখানে রাজকীয় প্রাসাদ বানানোর নির্দেশ দেয়। এখানকার দুর্গ ও আশেপাশের প্যালেস, বাগান এবং অন্যান্য কাঠামো সেই সময়ের ইতিহাস বহন করে চলছে।
মূলত এই শিলা পাথরটি গলিত ম্যাগমা, যা শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হয়েছে। একসময় এখানে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি ছিল তবে এখন শুধুমাত্র সিগিরিয়া রক ও পিডুরাঙ্গুলা রক অবশিষ্ট আছে। শিলার উত্তরের দিকে একটি সঙ্কীর্ণ রাস্তা আছে ওখানে ১৮৫৮ সালে সিংহের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছিলো তারপর থেকে এই জায়গার নাম সিগিরিয়া। সিগিরিয়া ‘সিনহা গিরি’ শব্দ থেকে আগত এবং এর অর্থ সিংহ পাথর।প্রকৃতি ও মানব কল্পনার এক অনবদ্য সৃষ্টি সিগিরিয়া। যাচ্ছি রামায়ণের পথে কিন্তু সমস্ত শ্রীলঙ্কা জুড়ে রয়েছেন গৌতম বুদ্ধ। দেশটাকে বলা হয় বুদ্ধের শহর ।
পরের দিন ঠিক করা হলো সোজা যাবো অশোকবন । ক্যান্ডি ॥হয়ে যেতে হবে ।তাই ঠিক করা হলো ক্যান্ডিতে থেকেই যাই ।পাহাড় দিয়ে ঘেরা শহর কে দেখতে মনোরম লাগে । ওলন্দাজ, ইংরাজ এবং পর্তুগীজ উপনিবেশের সময়ে এই শহরটি ছিল শেষ স্বাধীন দুর্গ সিংহলী রাজাদের। ১৮১৫ খৃষ্টাব্দে এই শহর ইংরাজরা কৌশল করে দখল নেয়। পৃথিবীর সমস্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই শহর বিশেষ ভাবে পূজিত। কারণ, এই শহরের “দালাদা মালিগাওয়া” মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের দাঁত সংরক্ষিত আছে। এখানকার লেকটি বড় মনোরম । লেকের মধ্যের দ্বীপটিকে দুধ সাগর, বলা হয়। গ্রীষ্মকালে রাজা-মহারাজারা এটাকে গ্রীষ্মাবাস হিসাবে ব্যাবহার করতেন। বর্তমানে শহরটি সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত।
ক্যান্ডি ঘুরে আমরা যাচ্ছি অশোক বন দেখার জন্য। জায়গাটার নাম নুয়ারা এলিয়া। সিংহলী ভাষায় নুয়ারা মানে নগর আর এলিয়া মানে জ্যোতি।শ্রীলঙ্কায় প্রথম আলো এখানে এসে পরে । এখানে সীতা আম্মার জন্য বিগলিত স্থানীয় মানুষ আর আমাদের মত ভারতীয় পর্যটকেরা । ক্যান্ডি থেকে নুয়ারা এলিয়া যাবার পথে রামবোডা পর্বত দেখা যায়।এই পথ টা পাহাড় আর পাহাড় সেখানে এঁকে বেঁকে যে মনোরম বীথিপথ চলে গেছে সেই পথ দিয়েই রাবণ সীতা কে অশোক বনে নিয়ে যান, এমনি বিশ্বাস করা হয়। নিজের রাজধানী কেমন সুন্দর সীতাকে তা ব্যাখ্যা করতে করতে চলেছিলেন রাবণ। এই বনানীকে বলা হয় চ্যারিয়ট পাথ। সীতার চোখের জল পড়তে পড়তে গেছিল এখানে। তাই কেউ কেউ সীতা টিয়ার পণ্ড বা অশ্রুকুন্ডও বলেন।নুয়ারা এলিয়ার সবুজ পাহাড়আর চা বাগানে ঘেরা , ফুল পাখীর স্বর্গরাজ্য অশোক বটিকা বা অশোক বন আজো জ্বলজ্বল করছে নিজের সবুজ জ্যোতিতে। রাবণের বিলাস বহুল প্রাসাদে সীতার থাকতে আপত্তি থাকায় এই সুন্দর অশোক বনে রাবণ তাঁকে রেখেছিলেন, এমনি বিশ্বাস রামায়ণে। এই অশোকবন শ্রীলঙ্কার হাকগালা ন্যাশানাল পার্ক এখন। অত্যন্ত সুন্দরভাবে সংরক্ষিত এই বটানিকাল গার্ডেনটি বেশ দামী টিকিট কেটে আমাদের মত বিদেশী পর্যটকদের দেখতে যেতে হয়। সেখানে পৃথিবীর সব গাছ রয়েছে। সেখানেই দূরের এক উঁচু পাহাড়ের খোঁচাটির নাম হাকগালা রক। দেখে মনে পড়ল আবারো রামায়ণের কাহিনী। সেই পাহাড়ের উল্টোদিকেই এখন হয়েছে সীতা মাঈয়ার অপূর্ব এক মন্দির। বন্দিনী সীতাকে এখানেই কাঁদতে দেখে পাহাড়ের মাথা থেকে হনুমান এক লাফে সেখানে হাজির হয়ে সীতার হাতে দেন রামের আংটি, সীতা যা রাবণের পুষ্পক রথে আসার সময় ছুঁড়ে ফেলেছিলেন আকাশপথে। চোখে পড়ল মন্দির সংলগ্ন খরস্রোতা পাহাড়ী নদী, নুড়িপাথরের বুকে এখনো যা বয়ে চলেছে অবিরত। সীতাকে রাবণ অশোক বনের এই অঞ্চলেই বন্দী করে রেখেছিলেন। তবে সসম্মানে। সীতা প্রতিদিন এই নদীতেই স্নান করতেন । এই নদীর তীরেই রয়েছে মস্ত এক শিলাখন্ডের ওপর হনুমানের পায়ের ছাপ। শক্তিমান হনুমানের লাফানোর ফলে যা বহু যুগ আগে পাথরের মধ্যে গর্ত সৃষ্টি করে রেখেছে । এমনি বিশ্বাস স্থানীয় মানুষের।সীতার একটা মূর্তি করে রাখা আছে ।
যে হনুমান লঙ্কাপুরী কে জ্বালিয়ে দিয়েছিল সেখানে হনুমান পূজা পান । এই অঞ্চলে আসার পথে তাই বুঝি পড়েছিল ভক্ত হনুমান মন্দির। এখানে সীতা আর হনুমান সর্বত্র পূজ্যতে। এই স্থানকে স্থানীয় মানুষ "সীথা এলিয়া"ও বলে যার অর্থ সীতার জ্যোতি। রাবণের সঙ্গে অশোকবনে আসার পথে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সীতা এখানে।সীথা এলিয়া থেকে কিছুদূরেই এক বনভূমি যেখানে সীতার অগ্নি পরীক্ষা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। সিংহলীভাষায় এই অঞ্চলের নাম Divurumpola বা ইংরেজীতে Place of oath। দলীয় বা পারিবারিক বিবাদ, বিরোধ নিষ্পত্তি করার সময় শ্রীলংকার আইনি ব্যবস্থা এই মন্দিরে নেওয়া শপথকে এখনও আইনি মান্যতা দেয়। নুয়ারা এলিয়ার আরেকটি অন্যতম পীঠস্থান হল গায়ত্রী পীঠ বা গায়ত্রীদেবীর জাগ্রত এক মন্দির। সেখানে গায়ত্রীদেবীর মন্দিরে পুজো হয় নিয়মিত। এই অঞ্চলই ছিল লঙ্কার অন্যতম এক উপবনাঞ্চল, রামায়ণে উল্লিখিত নিকুম্ভিলা। এই স্থানের ঐতিহাসিক আরেক মাহাত্ম্য নিকুম্ভিলা যজ্ঞ। রাবণের পুত্র মেঘনাদ রাম-লক্ষমণের সঙ্গে যুদ্ধের পূর্বে নিকুম্ভিলা যজ্ঞ করেছিলেন এই স্থানে। মেঘনাদের বরটি এমনি ছিল যে যজ্ঞ সম্পূর্ণ হলেই তিনি অজেয় হবেন। তাই পরপর দুবার তিনি যজ্ঞ সম্পূর্ণ করে ধরাশায়ী করেন লক্ষ্মণ কে । লক্ষ্মণ পুনরুজ্জীবিত হয়েছেন জানতে পেরে আবার মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে যজ্ঞ সম্পাদনা করতে যান। এদিকে বিভীষণ তার গুপ্তচর মারফৎ সেই সংবাদ পেয়ে রামকে সতর্ক করেন। কারণ যজ্ঞ সম্পূর্ণ হলে মেঘনাদ অজেয় হয়ে যাবেন। বিভীষণ লক্ষ্মণকে যজ্ঞাগারে নিয়ে যান। যজ্ঞাগারে মেঘনাদ অস্ত্র স্পর্শ করতেন না। তিনি প্রথমে যজ্ঞের বাসন ছুঁড়ে লক্ষ্মণকে অচেতন করে দেন। কিন্তু অস্ত্রাগারে যাওয়ার সময় পান না। তার পূর্বেই লক্ষ্মণের জ্ঞান ফেরে এবং তিনি নিরস্ত্র মেঘনাদকে হত্যা করেন।
নুয়ারা এলিয়া থেকে বেন্টোটা যাবার পথে পড়ে শ্রীলঙ্কার অনেকগুলি জলপ্রপাতের মধ্যে একটি, যার নাম রামবোডা ওয়াটারফলস। রামবোডা গ্রামের অন্তর্গত ১০৯ মিটার উঁচু এই জলপ্রপাতটির কাছেই হনুমান নাকি সীতা উদ্ধারের জন্য বিপুল শক্তি সঞ্চয় করেছিলেন।
শ্রীলঙ্কার গুরুলাপোথা কে বলা হয় লঙ্কাপুর। ক্যান্ডি থেকে গুরুলাপোথা পৌঁছতে সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েকের কম। কিংবদন্তী বলে সবুজ পাহাড়, ঝর্ণা আর ছোট ছোট নদী ঘেরা অপূর্ব সুন্দর এই স্থানে রাবণের রাণী মন্দোদরীর প্রসাদ ছিল। আকাশ পথে সীতা কে নিয়ে যাবার সময় রাবণ এই প্রাসাদে তাকে কিছুদিন রাখেন। তারপর আবার বিশ্রাম নিয়ে অশোক বনের দিকে যাত্রা করেন। এই কারণে এই জায়গার নাম সীথা কটুয়া বা সীতা দুর্গ।
রামায়ণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য তীর্থস্থান হল উসসাংগোডা ।এটি দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত, রামায়ণ
মতে যেখানে সীতার সঙ্গে দেখা করার পর হনুমান রাবণ এবং তাঁর রাক্ষস বাহিনীর শক্তি পরীক্ষা করার জন্য লঙ্কাপুরী আগুণ লাগিয়ে ছারখার করেন। তখন হনুমানের লেজটি রাক্ষসরা আগুন ধরিয়ে দেয়। উসসাংগোডায় নাকি রাজা রাবণের ব্যবহৃত আকাশপথে চালিত পুষ্পক রথের বিমানবন্দরটি ছিল বলে বিশ্বাস স্থানীয় মানুষজনের।
হাতির পুনর্বাসন কেন্দ্র
আমরা ভারত মহাসাগরের তটরেখা ধরে চলেছিলাম শ্রীলংকার অন্যতম সৈকত শহর বেন্টোটায় । যাবার পথে পড়ে গল্ নামে এক বিস্তীর্ণ শহর। রামায়ণের জন্য বিখ্যাত এই গল্ শহরের অন্তর্গত রুমাস্যালা পর্বত। হনুমান হিমালয় থেকে শক্তিশেলে বিদ্ধ অচৈতন্য লক্ষ্মণের জন্য ভেষজ জরিবুটি বিশাল্যকরণী খুঁজতে গিয়ে পুরো গন্ধমাদন পাহাড় টিকেই নাকি তুলে এনেছিলেন এই গল্ অঞ্চলের উনাওয়াটুনাতে ।
যেখানে পাহাড়ের পাদদেশ অবিরত স্পর্শ করে ভারত মহাসাগরের উত্তাল ঢেউ। নীল আর সবুজে মাখামাখি এই সমুদ্রতটে আমরা দুদিন বেন্টোটায় কাটিয়ে আবার কলম্বো হয়ে ফিরি । এই লেখাটি লেখার জন্য আমি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের কিছু তথ্য ও লেখা নিয়েছি । কেননা সব জায়গায় যাওয়া হয়নি । গল আমাদের ট্যুরের মধ্যে থাকে না । যখন শুধু শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ নিয়ে লিখবো তখন যুক্ত হবে আরো সুন্দর সুন্দর স্থান । এটা রামায়ণের পথ তাই সে পথ থেকে অন্য পথে গেলাম না ।
শ্রীলংকার চা বাগানসিগিরিয়া (রাবণের ভাই কুবেরের প্রাসাদ)
মান্নার (রামেশ্বর সেতুর শেষ বিন্দু)
নুয়ারা এলিয়া (অশোকবন, সীথাআম্মার মন্দির, হনুমানের পায়ের ছাপ, সীতার স্নানের জায়গা)
সীথা এলিয়া (হনুমান মন্দির)
ধিভুরাম্পুলা (সীতার অগ্নি পরীক্ষার স্থান)
রামবোডা জলপ্রপাত (হনুমান শক্তি সঞ্চয় করেন)
রামবোডা (চ্যারিয়ট পাথ, সীথা অশ্রুকুন্ড)
গুরুলাপোথা ( সীথা দুর্গ )
গায়াত্রীপীঠ ( নিকুম্ভিলা)
উনাবান্টুনা (গল, গন্ধমাদন উপড়ে এনে ফেলেছিল হনুমান)
সবাই এখানে মন্তব্য করুন
উত্তরমুছুনDarun laglo dada
মুছুনKobe jaben abar gele jabo
উত্তরমুছুনLekhata khub sundor, mon chuye gelo
উত্তরমুছুনthank tou
মুছুনখুব সুন্দর লেখা
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর লেখা। ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনthanks
মুছুনখুব ভালো ।
উত্তরমুছুনthanks
মুছুনযথাযথ ও সাবলীল বর্ণনা!!অত্যন্ত মনোগ্রাহী।সমৃদ্ধ হলাম।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনখুব ভালো লাগলো ।
উত্তরমুছুনএমন বন্ধী-সময়তেও নিজেকে অবাক করে পাড়ি দিলাম লঙ্কাপতির 'পুস্পক-রথে'। এতো সুন্দর তথ্য সমৃধ্য লেখনী আমাদের সাথে ভাগ করে নেবার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ 🙏
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনDaroon
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনOsadharon lekha ta. Onek kichu jante parlam.
উত্তরমুছুনঅনেক শুভেচ্ছা জানবেন
মুছুনআপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
উত্তরমুছুনআপনি আমার শুভেচ্ছা জানবেন
মুছুনঅসাধারন লেখা।রামের রাজ্য যত প্রকাশিত হয়েছে।রাবণের এত ডিটেলিং কোথায় পাইনি।অনেক ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনহ্যাঁ ঠিকই বলেছেন
মুছুনখুব সুন্দর বর্নণা।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনখুব সুন্দর লেখা। অজানা কথা জানলাম।
উত্তরমুছুনআপনি আমার শুভেচ্ছা জানবেন
মুছুন
উত্তরমুছুনআপনার লেখা অনবদ্য। এতো তথ্যপূর্ন লেখা লিখতে তো আপনাকে বেড়াতে গিয়ে প্রতিটি পাহাড়-পর্বত-নদী-বনানীর সব তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে । আপনার এই বিস্তারিত বিবরন পাঠকদের মানসভ্রমন করিয়ে আনলো ।
রাবনের চরিত্র টিকে অনেকেই সম্ভ্রম করে , আমিও ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনDarun
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ
মুছুনআমার শুভেচ্ছা নেবেন
উত্তরমুছুনNice
উত্তরমুছুনKhub sundor lekha 👍
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে
মুছুনKhub sundr
উত্তরমুছুনAnek natun bisay jante parlam🙏
উত্তরমুছুনআপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মুছুনDarun laglo
উত্তরমুছুনKhub sundar .
ধন্যবাদ
মুছুনKhb vlo laglo ank kichu jante parlm
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক শুভেচ্ছা
মুছুনKhub sundr lekha
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ
মুছুনDarun
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন