জুরিখের ট্রাম গাড়িতে ভ্রমণ


 জুরিখের ট্রাম গাড়ি। 

বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় 

সুইজারল্যান্ড মানে আল্পসের মাথা আর বরফের চূড়া। এটা একটা মিথ  তৈরি হয়ে গেছে সুইজারল্যান্ডকে নিয়ে। 

এর বাইরে ও যে  সুইজারল্যান্ডের আরো একটা পৃথিবী আছে সেটা আমরা দেখতে ভুলে যাই, বা বলতে ভুলে যাই। 

বরফের ভেতর ঢুকে যাওয়া আর বাইরে থেকে বড় দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।  এই পার্থক্য আরো ভালোভাবে বুঝলাম যখন আমরা জুরিখে এসে পৌঁছলাম। প্রাচীনতার মধ্যে আধুনিকতাকে ঢুকিয়ে দেওয়ার একটা বড় সাফল্য এসেছে এই জুরিখে। ঝকঝকে নীল আকাশ, দূরে পাহাড় জুড়ে বরফের রেখা আর পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে লিম্যাট নদী। নদী টি শুরু হয়েছে এই জুরিখে থেকেই । রাস্তার আশেপাশে হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ে দু-একটা টিউলিপ ফুল। 

সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীনতম  শহর জুরিখ। এটিই ইউরোপের সেন্ট্রাল পয়েন্ট। সুইজারল্যান্ডের অন্যান্য শহরের মত জুরিখকে একটি ব্যয়বহুল শহর বলা হয় । সেই দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে সুপরিচিত। ইউরোপের প্রধান শিল্প ও অর্থনৈতিক রাজধানীগুলোর মধ্যে জুরিখ পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক এবং আকর্ষণীয় স্থান। সাংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য এখানে আছে বেশকিছু জাদুঘর এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা। পর্যটকদের দর্শনের জন্য জুরিখ সেরা সুইস শহরগুলির মধ্যে অন্যতম।

   জনপ্রিয়তা হবার বড় কারণ  স্থাপত্য নিদর্শনের মধ্যে আছে বেশ কয়েকটি ল্যান্ডমার্ক, প্লাজা, লিনহেনহফ, ফ্রমুমুনস্টার, সেন্ট পিটার্স চার্চ, নিউ মার্কেট এবং পুরানো মধ্যযুগীয় রাথাউস আবাসস্থল।

জুরিখের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং অবাক করা কান্ড হচ্ছে  ট্রাম গাড়ি । সব মিলিয়ে ট্রাম আছে ২৫৮ টি । এই ট্রামের চলাচলা ১৭১ কিমি । টোটাল লেংথ । ট্রেক লেংথ ডবল ৭২ কিমি । রুট লেংথ আছে ১১৮ কিমি । মোট  ১৫ টা রুটে এই ট্রাম চলে । খু্ব যে ভিড় তাও নয় ।একবার দৃশ্যটা ভেবে দেখুন । চারিপাশে সবুজ গাছগাছালি । একপাশে বিশাল লেক । আকাশের দিকে তাকালে আলসের বরফ চূড়া । আপনি এরাম একটি গ্রামে চেপে ধরছেন শহর ।  ১৮৮০ .সালে  প্রথম ঘোড়া দিয়ে টানা হত। ঠিক দশ বছর পর এটা চললো ইলেকট্রিকের সাহায্যে । সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে সারাদিন ট্রামে যতবার ইচ্ছা তত বার উঠা নামা করা যায়। ভাড়া ৮.৬০ সুইজ ফ্রাংক। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছবিটা তুলেছি সেই রাস্তার নাম বাহ্নোফ্ল্যাপ্টজ স্ট্রিটে।   ঠিক তার সামনে দেখা যাচ্ছে জুরিখের সবচেয়ে প্রাচীনতম হোটেল শোয়েজারহফ। ১৪০ বছরের পুরনো হোটেল এখন ৪ স্টার হোটেল । ভারতীয় মুদ্রায় প্রতি রাত্তিরে ভাড়া প্রায়  ৩৫ হাজার টাকা । হোটেলের চারিপাশে রয়েছে কফি শপ থেকে বিভিন্ন ধরণের বিপণন কেন্দ্র ।  দুই মিনিট গেলে জমজমাট রেল স্টেশন জুরিখ।  এখান থেকে ট্রামে চেপে বা হেঁটে  দেখে নেওয়া যায় জুরিখ জু ,ফিফা হেড কোয়ার্টারের পেছনেই জুরিখ জু এবং সাথে একটি টেনিস কোর্ট। রাস্তা ঘুরে জুরিখের ফিফা হেড কোয়ার্টার এখানেই রাখা আছে আসল বিশ্বকাপের ট্রফিটি । ট্রামে চেপে দেখে নেওয়া যায় নোবেলজয়ী বিখ্যাত জার্মান লেখক টমাস মানের বাড়ি।  বাড়ির পাশেই তার কবর। হাতে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন পৃথিবীর সব থেকে সৌন্দর্য্য মন্ডিত বুরক্লিপ্লাটজ লেক। ৮.৬০ সুইস ফ্রাংক দিয়ে  দেড় ঘন্টার জন্য লেকে ঘোরা যায়। তবে আপনার আছে যদি ট্রাম বা অন্য কোন টিকিট থাকে তাহলে আপনি ৫০% ছাড় পাবেন।

মন্তব্যসমূহ

  1. Lekhata khub barnana sahakare hoyeche. Aamar pore bhalo laglo.

    উত্তরমুছুন
  2. বাঃ, ভারী ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  3. আপনার লেখা খুব সুন্দর, এই ধরনের লেখা আরো চাই।

    উত্তরমুছুন
  4. আপনার লেখা গুলো খুব সুন্দর। আপনার লেখার মধ্য দিয়ে আমার ও ঘোরা হয়ে যায়।

    উত্তরমুছুন
  5. খুব ভালো লাগলো পড়ে। চমৎকার লেখা আপনার।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রামায়ণের পথে শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ

কল্পা কিন্নর হিমাচল প্রদেশ

ইতালির কলোসিয়াম