রুদ্রপ্রয়াগ

 সুর ও স্বরের মিলনক্ষেত্র রুদ্রপ্রয়াগ 

বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় ॥ 

যদি আমি বলি সূর আর স্বরের মিলনক্ষেত্র রুদ্রপ্রয়াগ ; তা হলে সকলেই আমাকে ধমক দেবেন । কেন ? আসলে ওটা তো মন্দাকিনী - অলকানন্দার মিলনস্থল । পঞ্চ প্রয়াগের একটি প্রয়াগ । সেখানে সুর আর স্বরের প্রবেশ ঘটলো কি করে ? ছন্দকে যে ভাবে ভাঙ্গা যায় সেভাবেই ভেঙে একটু বলি । রাগরাগিণীর সৃষ্টিকর্তা নারদ । ছয় রাগ  ছত্রিশ  রাগিনীকে তিনি সৃষ্টি করেন  । নানান শব্দে নারদ সকলকে অহংকারের  নিজস্ব রূপটাকে প্রকাশ করলেন । শিবের কাছে গেলেন , শিব তার অহংকার দেখে অভিশাপ দিয়ে রাগারাগিনী দের ধ্বংস করলেন । 

রুদ্রপ্রয়াগ । ছবি তাপস কুমার দত্ত

 সৃষ্টির মৃত্যু ঘটলে নারদ ভেঙে পড়লেন । নটরাজের কাছে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করলেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য । নটরাজ বললেন যাও,অলকানন্দা ও মন্দাকিনী সঙ্গমস্থলে গিয়ে তপস্যা করো কয়েক বছর ,তারপর ফিরে পাবে তাদের । আর সেটাই করলেন নারদ মুনি । সূর আর স্বরের মিলন ঘটলো রুদ্রপ্রয়াগে । প্রথমে বাঁচিয়ে তুললেন রাগদের । নারদ সংহিতায় বর্ণনা আছে, ছয় রাগ এবং ছত্রিশ রাগিণীর । রাগের চলন এবং তার অভিব্যক্তির উপর নির্ভর করেই,পুরুষ অর্থে রাগ এবং তাদের স্ত্রী হিসেবে রাগিনীকে চিহ্নিত করা হয় । সেই সময়ে ছটি রাগে র নাম করণ করা হয় যেমন ভৈরব, মালকোষ, হিন্দোল, দীপক , শ্রী ও মেঘ । রাগিণীদের নাম কয়েকটা জানি । সব জানি না তাই লিখতে পারলাম না । 

প্রচলিত কথা, নারদ মুনি নিজেকে সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে মনে করে ও রুদ্রপ্রয়াগ এসে তপস্যা করছেন কিনা দেখার জন্য শিব নাকি নিজেই চলে এসেছিলেন । তারপর থেকেই এর নাম হয় রুদ্রপ্রয়াগ । আমার মনে হয়েছে অলকানন্দা ও মন্দাকিনী দুই নারী কখনো এক জায়গায় থাকতে পারে না ঝগড়া তো হবেই সেই ঝগড়ার একটা রুদ্ররূপ তৈরি হয়েছিল । সেই রুদ্ররূপই রুদ্রপ্রয়াগ ।

হরিদ্দার থেকে বাসে উঠেছি । দেবপ্রয়াগ শ্রীনগর পেরিয়ে রুদ্রপ্রয়াগ যখন পৌঁছলাম তখন বিকেল বিকেল । চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড় । পাহাড়ের মাথায় ঝাউ আর পাইনের লম্বা সারি ।গাছের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করেছে শহরে । রুদ্রপ্রয়াগ থেকে রাস্তা দুভাগ হয়ে গেছে । একদিকে যাচ্ছে কেদারনাথ । আরেক দিকে বদরীনারায়ন । রুদ্রপ্রয়াগ নিঃসন্দেহে একটি হিল স্টেশন হতে পারে । এখানে অনেক কিছু দেখার আছে । একটি বড় বটগাছ কে ঘিরে বাস স্ট্যান্ড । কেদারনাথ - বদ্রির পথে সমস্ত বাস এই গাছের তলায় কমপক্ষে কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট বিশ্রাম নেয় । বাসস্ট্যান্ডের চারিপাশে ছোট বড় হোটেল আর দোকান। বিভিন্ন অঞ্চলের যাত্রীদের ভিড়। চারিপাশের গিরি প্রাচীর ভেদ করে দুদিক থেকে দুই খরস্রোতা নদী নেমে আসছে । দুই নদীর গর্জনে রুদ্রপ্রয়াগ যেনো সব সময় ভয়ে কাঁপছে । এখান থেকে মন্দাকিনী তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে রুদ্রপ্রয়াগ থেকে মন্দাকিনী অলকানন্দার সঙ্গে মিশে অলকানন্দা হয়ে যাচ্ছে । মূল শহর থেকে সঙ্গম বেশ কিছুটা দূরে । বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কেদারের পথে । ব্রিজ পেরিয়ে যেতে হবে বাবা কালীকমলি ধর্মশালার  পাশ দিয়ে । এটাই সঙ্গমে যাওয়ার রাস্তা । কয়েক মিনিট হাঁটলেই সঙ্গম । দুই নদীর রং দেখে তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় । সিড়ি দিয়ে একদম সঙ্গমের কাছে চলে যাওয়া যায় ।সঙ্গমের সামনে দাঁড়ালে মনে হয় জাহাজে করে কোথাও যাচ্ছি । জলের তীব্রতা বড় ভয়ঙ্কর । সুন্দর এখানে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । একটু ধাতস্থ হলে কানে ভেসে আসবে নানান সুরের মূর্ছনা। এক একটা পাথরে নদী এসে ধাক্কা খাচ্ছে আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে নানা সুর । আবার কোন পাথর থেকে ভেসে আসছে শব্দ । এখানেই তো সুর আর স্বরের মিশ্রণ ঘটেছে । অলকানন্দা ও মন্দাকিনী দুই তরুনীর যখন মিলন হচ্ছে তার আগের দৃশ্যটা আরো সুন্দর । মনে হয় যেন নীল কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়েছে তরুনীর গা থেকে । নীল কাপড়ের উপর আছড়ে পড়ছে দুধ সাদা ফেনা । এ এক অদ্ভুত মিলন । সারা শরীরের অনুভূতিগুলো আবার নতুনভাবে সারা দিচ্ছে ।  সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে দেখি নারদ শিলা ॥ এইতো এখানে বসেই তপস্যা করেছিলেন নারদ ।

অলকানন্দা নেমে আসছে 

সঙ্গমের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলেই মন্দির । বটগাছের তলায় মন্দিরের ভেতরে রয়েছে শিবের কালো রুদ্রমূর্তি । চারিপাশে ছোট ছোট মন্দির আর তার পাশে সংস্কৃত টোল । আসলেএই শহরের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সচ্চিদানন্দ ।তিনিই এই মন্দিরটি পুনপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন । রুদ্রপ্রয়াগের প্রতিটি মানুষ এই স্বামীজীকে ভক্তি করেন ।  শহরের যাবতীয় উন্নতি করেছিলেন দৃষ্টিহীন এই মানুষটি । শহরে কলেজ , হাসপাতাল সবই তিনি তৈরি করেছিলেন এবং সেটা তীর্থ যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা করে । মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তা নিমে গেছে ব্রিজের দিকে । এই ব্রিজের নাম ঝুলা ব্রিজ ।ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মন্দাকিনী নদী  ব্রিজের একপাশে রুদ্রপ্রয়াগ জেলা ব্রিজ পেরিয়ে গেলে চামোলি জেলা । এই ব্রিজ পেরিয়ে গিয়ে সঙ্গমকে  ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায় । আরেকটি জায়গা থেকে রুদ্রপ্রয়াগকে খুব ভালোভাবে দেখা যায় সেটা হল গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিগমের বাংলো থেকে ।

মন্দাকিনীর  স্রোত । ছবি তাপস কুমার দত্ত

 মন টানে জিম করবেট এর সেই বিখ্যাত স্থানটি কে দেখার জন্য । যেখানে করবেট নরখাদক বাঘটিকে মেরেছিল ।  রুদ্রপ্রয়াগ বাস স্ট্যান্ড থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গুলাব রায় চটি । রুদ্রপ্রয়াগের শহরে প্রবেশের আগেই এটা দেখা যায় । একটি আম গাছ । গাছেতে বাঘের ছবি দিয়ে একটা বোর্ড । এই গাছে বসেই জিম করবেট নরখাদক বাঘটিকে মেরে ছিলেন । আম গাছ থেকে কয়েক হাত দূরে একটি ফলক । ফলক টি  করবেটের নামে । তাতে লেখা আছে  ১৯২৬ সালে  এখানে বসেই করবেটে নরখাদকটিকে গুলি করে মেরেছিলেন । একটা মজার গল্প বলি ।বাঘটি ১২৬ জন ব্যক্তিকে শিকার করেছিল ॥ তারিখটা ছিলো দুসরা মে। ২মে  রুদ্রপ্রয়াগের একটা মেলা বসে। মেলার নাম করবেট মেলা । বহু বছর ধরে এই মেলা চলে আসছে। মেলার একটি বৈশিষ্ট্য হলো সেই নরখাদকটি যে সমস্ত ব্যক্তিকে শিকার করেছিল তাদের পরিবারের মানুষজন এইমেলায় আসেন । সেটাই বংশ-পরম্পর চলে আসছে ।একসময় বাঘের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হতো । এখন মেলার সে রঙ নেই মেলার গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে । মানুষ জিম করবেটকে ভুলে যাচ্ছেন । করবেটের স্মৃতিফলকটিও বিচুলির গাদায় চাপা পড়ে আছে ।


কোটেশ্বর

রুদ্রপ্রয়াগের থানার পাশে বাবা কালি কমলি ধর্মশালায় বসে আছি । পাহাড়ে বৃষ্টি হয় । বড় বড় দানা । এই বৃষ্টি আজ থামবে না । অন্ধকার স্ফুলিঙ্গ আদি অনন্ত , বৃষ্টির শিল্প জানো নকশী কাঁথার মাঠ । রুদ্রপ্রয়াগে অলকানন্দা ও মন্দাকিনীর  মিলনের গর্জন আরো ভারী হচ্ছে । হুরমুড়িয়ে কোথায় যেন পাহাড় ভেঙ্গে পড়ল । কাল সকাল হতে অনেক দেরী । কাল কেদারনাথের পথে রওনা হব । সকাল থেকে যদি এরকম বৃষ্টি হয় তবে ভোর ভোর বেরোবো না ।  । কাল আমাদের যাত্রা স্থগিত থাকবে । মে মাস রুদ্রপ্রয়াগ একটু গরম ছিল । বৃষ্টিটা হবার পর , কনকনে ঠান্ডা লাগছে ।  

দুই পাহাড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে অলকানন্দা । ছবি তাপস কুমার দত্ত ।

সকালে উঠে দেখি আকাশে কালো মেঘ । বৃষ্টির প্রলয় নেই কিন্তু তার রেখা আছে । স্থির করলাম না আজ আর কেদারনাথের দিকে যাব না । তার বদলে আমরা আজ যাবো কোটেশ্বর । কোটেশ্বর সম্বন্ধে আমার খুব একটা ধারণা ছিল না । মরুতীর্থ হিংলাজ বইটি পড়ার সময় কোটেশ্বরের কথা পড়েছিলাম । তবে এ কোটেশ্বর সে কোটেশ্বর নয় । পরে উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে কোটেশ্বর নিয়ে আমার ভেতর একটা চোরাগুপ্তা স্রোত ছিল । 

বেলা একটু বাড়তে  আকাশের মুখে একটু সৌন্দর্য এল । আমরাও গুটি গুটি পায়ে রওনা দিলাম কোটেশ্বর এর দিকে । যে পথ কেদারের দিকে গেছে সেই পথেই আমরা হাঁটতে শুরু করলাম । ব্রিজ পেরিয়ে গিয়ে ডানদিকে একটা রাস্তা চলে গেছে চোপড়ার দিকে। আমরা ঐ পথ ধরেই হাঁটবো । একবারও মনে হয়নি গাড়ি করে যাব, কেননা তিন কিলোমিটার  হাঁটা আমাদের কাছে তখন কোন সমস্যাই নয় । তাছাড়া কাজও তো নেই, কি করব?পাহাড়ে  হাঁটবো ! 

 আমরা হাঁটছি অলকানন্দার পথ ধরে । গ্রামের পাহাড়ি রাস্তা । আম গাছে ছোট ছোট আম ধরেছে । কালকের ঝড়ে অনেক আম পড়ে আছে । দু-একটা আম কুড়িয়ে নিলাম । কাঁচা আম খেতে খেতে আমরা দুই বন্ধু হাঁটছি চোপড়ার দিকে । অলকানন্দার জল এত নীল এখানে ? অনেক নিচে অলকানন্দা । অলকানন্দার পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে বদ্রীনারায়ণের দিকে । বাস যাচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি , আমরাও যাব কদিন পরে । আমাদের পাশ দিয়ে একটা যাত্রীবাহী বাস ওপর দিকে উঠে গেল । ওই বাসটা চোপড়া যাচ্ছে । আমরা নেমে গেলাম ডান দিকের রাস্তা ধরে । আর হাফ কিলোমিটার গেলেই আমরাও পৌঁছে যাব কোটেশ্বর । অলকানন্দার শব্দ কানে আসছে । অলকানন্দার স্রোত  নিচে নেমে আসছে । নিঝুম পরিবেশ ; মানুষের চিহ্ন নেই । বিরাট চাতালে শিবের মন্দির । আর মস্ত বড় একটা আম গাছ । মন্দিরের পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে । পাশেই রয়েছে ধর্মশালা । পাহাড় দিয়ে ঘেরা অঞ্চল । এত শান্ত পরিবেশ যে গাছের পাতা নড়লেও স্তব্ধতা ভেঙে যায় । এরকম একটা স্তব্ধতার খোঁজেই তো মানুষ পাহাড়ে আসেন । দু একটা পাখি আকাশে উড়ছে । কিন্তু তাদের গলায় শব্দ নেই । শব্দই তো সত্য । শব্দ যদি সত্য হয় সেই সত্যিকে ধরে রেখেছে অলকানন্দার বয়ে যাবার শব্দ । কাল রাতে প্রবল বৃষ্টি হবার পর পরিবেশটা এখানেই থমকে দাঁড়িয়ে আছে । এখানে আসার পর বুঝতে পারি মহাপুরুষরা এখানে বসে কেন  শিবের তপস্যা করেছিলেন । মন্দির চত্বর থেকে একটা রাস্তা নিচে নেমে গেছে নদীর দিকে । প্রথম ধাপে বিরাট একটি ঘন্টা । কয়েকটা সিঁড়ি ভাঙলেই অদ্ভুত একটা দৃশ্য চোখে পড়বে । দুই পাহাড়ের ভেতর দিয়ে অলকানন্দা নেমে আসছে । এক ঝলকে মনে হবে  এতো  মধ্যপ্রদেশের মার্বেল রকের ছবি দেখছি । পাহাড়ের ভেতর দিয়ে নদী এঁকেবেঁকে হারিয়ে যাচ্ছে । সূর্যের আলো পড়ে কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে রামধনু । এখানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা না বলেই কেটে যায় । এখনো কোটেশ্বর দেখা হয়নি । নদী যেখান দিয়ে বয়ে আসছে তার দুপাশে সুউচ্চ পাহাড় । যেন গিরিখাত ।  কোটেশ্বর শিব কোথায় থাকেন তা বলে দেওয়ার মানুষ একজনও নেই । অনেকটা সময় সিঁড়িতে বসে থাকার পর একজন সাধু বাবা পাহাড়ের গা থেকে বেরিয়ে এলেন । বুঝলাম এদিকেই হয়তো কোটেশ্বর । তিনি ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন । পাহাড়ের গায়ে উপর থেকে জল পড়ছে ,দৌড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই । খুব সরু এবং পিচ্ছিল রাস্তা । পা ফসকে গেলেই নদীতে । ধীরে ধীরে গুহার ভেতর প্রবেশ করি । অন্ধকার গুহার ভেতরে দুটি প্রদীপ জ্বলছে । মাথার উপর কয়েকটা ঘন্টা ॥ অদ্ভুত একটা স্বপ্নময় পরিবেশ । গুহার ভেতরে রয়েছে অসংখ্য শিব । এই শিবমূর্তি কেউ তৈরি করেননি । প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয়েছে । গুহার ভেতর প্রবেশ করতে ভয় লাগে এই বুঝি শিবের মাথায় পা পড়ল ! আমরা যেমন বলি যেখানে রাখিবে  হাত , সেখানেই রবীন্দ্রনাথ । আর গুহার ভেতর যেখানে রাখিবে হাত সেখানেই রুদ্রনাথ । কোটি শিবের অবস্থান ।   কিভাবে যে এত শিবলিঙ্গ তৈরি হলো তা রহস্য । কেউ বলেন , নদীর স্রোতের কয়েকটা ধারা গতির উচ্ছ্বাসে গুহার মধ্যে আসে , ঘুরে আবার বেরিয়ে যায় । আবার নতুন ধারা আসে । কেমনি চক্রাকারে ঘুরেফিরে বার হয়ে যায় ।  এই স্রোত চলাচলের ফলে পাথর কাটে , শিব লিঙ্গের আকার নেয় । আমরা জলের স্রোত  দেখতে পাইনি । হয়তো বহু বছর আগে এরকম হয়তো ছিল। শিবের মাথায় সবসময় জল পড়ছে , আর জল পড়ার ফলে প্রতিটি শিবের রং বিভিন্ন । কোনটা হলুদ ,কোনোটা লালছে, কোনোটা বা সবুজ । অদ্ভুত এক পরিবেশ । খালি পায়ে এই গুহার ভেতর প্রবেশ করতে হয় পায়ে লাগে হিম শীতল জল । ভেতরের একটি প্রদীপ নাকি বহু বছর ধরে জ্বলেই  চলেছে , গুহা নাকি কোনদিন অন্ধকার হয় না , এরকমই স্থানীয় মানুষের ধারণা বা বিশ্বাস । মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়িতে বসে থাকি । হঠাৎ লক্ষ্য করি অলকানন্দা যেখান থেকে বেরিয়ে আসছে সেই দুই পাহাড়ের মাথায় একটা লোহার ব্রিজ । আমাদের মাথায় চাপলো ঐ ব্রিজে আমাদের যেতে হবে । কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবো কোথা দিয়ে যাব ? কিছুই জানিনা । দেখতে দেখতে সময় অনেকটাই কেটে গেছে , খিদেও পেয়েছে । এখানে তখনও একটা চায়ের দোকান নেই । এতটা রাস্তা যাব কি করে খালিপেটে । আবার নিচে নেমে আসি গুহার ভেতর প্রবেশ করি । শিবের মাথায় যত ফল-ফলাদি ছিল সব কুড়িয়ে নি । সেই ফল খেতে খেতে আমরা আবার রুদ্রপ্রয়াগের পৌঁছে যাই ।

কিভাবে যাবেন : 

ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই যোগাযোগ আছে হরিদ্বারে সাথে । অথবা বিমানে জলি গ্রন্ট এয়ারপোর্ট দেরাদুন বিমানবন্দরে হয়ে আসতে পারেন। হরিদ্বার ঋষিকেশ বা দেরাদুন থেকে বাসে সরা সরি বাস পাওযা যায় । বাসে যেতে সময় লাগে   ৫ ঘন্টা। হরিদ্বার থেকে প্রায় ১৫০ কি.মি পথ। প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন। 

কোথায় থাকবেন :

 হরিদ্বারে থাকার জায়গার কোন অভাব নেই । ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের হোটেল পাওয়া যায় । প্রচুর ধর্মশালা ও আছে । রুদ্রপ্রয়াগের সবচেয়ে ভালো থাকার জায়গা গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিয়মের হোটেলে । অনলাইনে বাড়ি বসেই বুকিং করা যায় । কালি কামলি  ধর্মশালা  খুব সুন্দর । এছাড়া ছোটবড় প্রচুর হোটেল আছে ॥ 

লেখার সব ছবি তুলেছেন তাপস দত্ত ।

মন্তব্যসমূহ

  1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো লাগলো an👌কিছু জানতে পারলাম, এই রকম লেখা আরো চাই. ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  3. অপূর্ব সুন্দর বর্ননা।একটি ছবি এঁকে দিয়েছেন।যাবার ইচ্ছা আছে।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রামায়ণের পথে শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ

কল্পা কিন্নর হিমাচল প্রদেশ

ইতালির কলোসিয়াম