কচ্ছের বুনো গাধা ।
কচ্ছের বুনো গাধা ।
বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় ।
কচ্ছের রণে বুনো গাধা দেখার জন্য খুব সকালে বেরিয়ে ছিলাম আমেদাবাদ থেকে । অনেকেই বলেছিলো গাধা দেখার কি আছে ? গাধা কি কখনো দেখনি ? একটা ইতর শ্রেণী জীব দেখার জন্য আর যাই হোক এতো দূর আসা যায় ? আমি তাদের বলি কেন রে ভাই সিংহ দেখতে কেনিয়া যাও কেন ? যুক্তি তক্কো গপ্পো যাই থাক না কেন আমি দেখতে যাব এমন এক জীবকে পৃথিবীতে আর কোথাও তাকে দেখা যায় না । যাদের দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মত বুদ্ধিটা আসলে গাধার মত !
করোনার পর এই প্রথম এলাম আমেদাবাদে । এক-চোখে কিছুই বুঝলাম না দু বছরে কতটা পাল্টে গেছে শহরটা । তবে একটা জিনিস পাল্টেছে ! কাটিং চা আর পাওয়া যায় না । করোনার ভয়ে এখন আর ডিশ ব্যবহার করা হয় না তার বদলে কাগজের কাপে চা দেয়া হচ্ছে । গুজরাটে ভোর হয় অনেক দেরিতে । বের হবার কথা সকাল ৮ টায় আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মনে হয় ভোর ৬ টা।আসলে তখনই সকাল ৮ টা ছুই ছুই । বড্ড দেরি হয়ে গেল । সবরমতি নদী যখন পার হলাম তখন ঘড়িতে নটা বাজে ।২০২১ ডিসেম্বর মাস শীতের কোন আদর গায়ে নেই গাড়িতে বসে মনে হচ্ছিল জানালাটা একটু খুলে দি,আশ্রম রোড থেকে সবরমতী বাতাস একটু বুকে লাগুক ।
ঢোকার গেট |
যাব সুরেন্দ্রনগর জেলার পাটড়ি। ওখানে আছে ভাবনা রিসোর্ট । সেখানে গিয়ে একটু থিতু হব । ভাবনা রিসোর্টের মালিক আমার বহুদিনের পরিচিত মানুষ । প্রকৃতিপ্রেমিক । কচ্ছের লিটল রণ নিয়ে তার প্রচুর গবেষণা ও আছে । তিনি আমাকে বলেছিলেন তিনটি কারণে মানুষ এখানে আসে । একটি কারণ বুনোগাধা যা পৃথিবীতে আর কোথাও দেখা যায় না । দ্বিতীয় কারণ রাজস্থানের ভরতপুরের পর সবচেয়ে বেশি পাখি এখানেই দেখা যায় । তৃতীয় কারণ লবণ বা নুন । খুব উচ্চ মানের লবণ এখানে পাওয়া যায় । নুন ছাড়া সবকিছু বি-স্বাদ। লবণকে কী করে ফেলে যাই এই সংসার থেকে। অতএব চল নুনের পাহাড়ে।
দিগন্ত জুড়ে মরুভূমি |
সানন্দা, ছোড়ডি ,ভিরমগ্রাম হয়ে যাব। ১৬৬ কি. মি.পথ। এই পথের দুপাশে ভারি থেকে মাঝারি শিল্প। যেখানেই ফাঁকা অঞ্চল সেখানেই সবুজের ছোঁয়া । এই পথেই টাটা কম্পানি নেনো গাড়ির কারখানা গড়ে তুলেছিল।
পাখিদের বিচরণ |
ভাবনা রিসোর্টে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় ঘড়িতে একটা বেজে গেছে । ভাবনা রিসোর্টের মালিক প্রশান্ত দা আমাদের বসিয়ে সাফারিতে যাবার গাড়ির খোঁজ নিতে লাগলেন । গাড়ি এলো। আমরা রওনা দিলাম। যাচ্ছি ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড অ্যাস বা ভারতীয় বুনো গাধাদের দেখতে ।সুরেন্দ্র নগরের ওয়াইল্ড অ্যাস অভয়ারণ্য যা ভারতীয় ওয়াইল্ড অ্যাস অভয়ারণ্য নামে পরিচিত,আরব সাগরের কাছে গুজরাটের কচ্ছের লিটল রানে অবস্থিত। গুজরাটের ওয়াইল্ড অ্যাস অভয়ারণ্যের জলাপূর্ণ জমি বিভিন্ন প্রজাতির স্বাভাবিক পশুর আশ্রয়স্থল। প্রায় ১০ কিলোমিটার যাওয়ার পর বড় রাস্তা ছেড়ে ডান দিকে নেমে পড়ল । একটা মন্দিরের গেটর মতো গেট, তাতে লেখা Welcome to wild ass Sanctuary . পারমিশনের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হলো । তারপর আমাদের প্রবেশ ।
কিছুটা যাবার পর মনে হচ্ছে মরুভূমিতে এসেছি । আর মরুভূমিতে হালকা তুষারপাত । কাদা মাটির উপরে যেন বরফের প্রলেপ । দূর থেকে বরফ মনে হলেও আসলে তারা নুনের আস্তরণ । যতদূর চোখ যায় কত দূরে কোন গাছপালার চিহ্ন নেই । একদম কাদার মরুভূমি । আরো কিছুটা দূরে যাওয়ার পর চোখে পড়ে টলটলে জল, জলের মধ্যে অসংখ্য ফ্লেমিঙ্গো , ক্রেন , ডালমেসিয়ান পেলিক্যান্, বড় ঝুঁটিত্তয়ালা ডুবুরি পাখি,সেকার ফ্যালকন,ইউরেশীয় স্পুনবিল ,সাধারাণ সারস ইত্যাদি পাখিদের যেন মেলা বসেছে । আমার কোন ক্যামেরা নেই মোবাইল ক্যামেরায় আমার ভরসা । আর যাই হোক মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে কখনো দূরের পাখির ছবি তোলা যায় না । চোখ মেলে শুধু তাকিয়ে থাকি পাখির দিকে । বেশ কিছুক্ষণ পাখি দেখার পর আমরা রওনা হলাম বুনো গাধা দেখতে । ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে সুরা নামে একটি অসুখে প্রায় উজাড় হয়ে গিয়েছিল বুনো গাধার প্রজাতি। ১৯৬২ সালে এই গাধার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৮৭০। কচ্ছের লিটল রনে ১৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। গুজরাত বন দফতরের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী, সে রাজ্যে বর্তমানে ৬০৮২টি বুনো গাধা রয়েছে। চলতি বছর মার্চ মাস পর্যন্ত করা হিসেবে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
নিজেরাই নিজের মতো। |
কচ্ছ শব্দের অর্থ সমুদ্রের তীরভূমি। কোথায় তীরভূমি? এবার ধুলো উঠতে শুরু করল যেন মরুভূমিতে বালিঝড় । তারই মধ্যে আমাদের চালক দূরে হাত দেখিয়ে বল্লেন ও দিকে তাকান । আমরা তাকিয়ে দেখি একসঙ্গে প্রায় গোটা ১৫ বুনোগাধা ঘুরে বেড়াচ্ছে । জিপ আস্তে আস্তে তাদের সামনে যেতে শুরু করল । জিপ গাড়ি যত এগোচ্ছে ওরা পিছচ্ছে । ক্যামেরায় তাদের কিছুতেই বন্দী করা যাচ্ছে না ।দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মতো হলেও, ঘোড়ার সঙ্গে গাধার পার্থক্য হল এই যে, এর ঘাড়ের উপরে থাকে খাড়া শক্ত লোমের কেশর (mane) আর লেজের উপর থাকে একগুচ্ছ লোম। তাছাড়া দেহের তুলনায় কান দুটো বেশ লম্বা। গায়ের রঙ লালচে ধূসর, অথবা ফ্যাকাশে বাদামি। নিচের দিক সাদা। বুনো গাধার বিজ্ঞানসম্মত নাম- ইকুয়াস হেনিওনাস (Equus Hemionus), উচ্চতা ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট। এদের অবস্থান আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশে। আমিও এগিয়ে চলি ওদের দিকে। চোখ মেলে ভালো করে তাদের দেখি । গাধার মত অবহেলা করার মত জীব এরা নয় । এরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে । আমি ওদের দৌড় দেখিনি । শান্ত ভাবেই মরুভূমির ভেতর ঘাস নেই কি খাচ্ছে ওরা? মাটির মধ্যে সবুজ রঙের গুল্ম জাতীয় শাক সেটাই ওদের খাদ্য। এই গুল্মতে থাকে লবণযুক্ত রস। এতেই তাদের জলের অভাব পূরণ করে। এই জলবায়ু ছাড়া এই প্রাণী বাঁচতে পারে না। যার কারণে কোন চিড়িয়াখানায় এদের দেখা পাওয়া যায় না।
ছবি তোলার জন্য এগিয়ে যেতেই ওরাও দূরে চলে গেল । |
ফেরার সময় আবার পাখি দেখার জন্য জিপ থামলো। অনেক সময় ধরে পাখি উড়ার ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকি। মন বলে ইমিগ্রেশন আর মাইগ্রেশন । এই শব্দ দুটো নিয়ে ভাবি।বিদেশে যাওয়া বন্ধ কিন্তু এরা এলো ডানায় ভর দিয়ে। এই জন্যই বলে পাখি তার ডানায় ভরসায় শুকনো ডালে বসে। আমরা আছি শুকনো মাটির উপর দাঁড়িয়ে সূর্য ডুবে যাবে। দিগন্ত জুড়ে অসাধারণ রঙের ছটা । ফ্লেমিঙ্গো গুলো তার ডানায় লুকিয়ে রাখে লালের আভাগুলো ।
Beautiful.
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ
মুছুনভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ জানাই আপনাকে
মুছুনOsadharon lekhoni
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক শুভেচ্ছা
মুছুনখুব সুন্দর উপস্থাপনা ,
উত্তরমুছুনদারুন লাগলো ।
অনেক ধন্যবাদ
মুছুনখুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক শুভেচ্ছা
মুছুনখুব ভালো লাগলো লেখাটা | অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য |
উত্তরমুছুনআমি খুব খুশি হলাম।
মুছুনasadharon bornona..
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনতোমার লেখা তো সবসময়ই খুব ভাল হয় এই লেখাও ভীষণ সুন্দর
উত্তরমুছুনআমার লেখা তুমি পড় জেনেও আনন্দ পাই ।
মুছুনখুব সুন্দর লিখেছেন দাদা। ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে
মুছুনApnar lekhata pore abar ghorar janya monta uru uru korchhe. Coronar bhoye. nijeke sanjata korchi.
উত্তরমুছুনঅবশ্যই যাবেন
মুছুনখুব ভালো লাগলো ।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে
মুছুনKi darun
উত্তরমুছুনPurono dinar kotha mona pora galo.
2014 ta gachelam tomat sata .
ধন্যবাদ
মুছুনলেখা পড়ে বড় আনন্দ পেলাম দাদা।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ দাদা
মুছুনভীষণ সুন্দর লেখা।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
মুছুনঅসাধারণ তথ্য সমৃদ্ধ লেখনী, আপনার লেখা পড়তে বসলে মানসচক্ষুতে ভ্রমণও সম্পন্ন হয়ে যায়. আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর গুজরাটে কাটিয়েছি চাকরি সূত্রে, কচ্ছ সমেত গুজরাটের প্রায় সব জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু 'বুনো গাধা ' দেখার সৌভাগ্য হয় নি. আপনার লেখা ও ছবি দেখে - সে সাধও পূর্ণ হোলো.
উত্তরমুছুনখুব আনন্দ পেলাম লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে ।
মুছুনবেশ লিখেছেন,মনে হচ্ছে আবার দেখছি,
উত্তরমুছুনআপনার সাথী ছিলাম ওই যাত্রায়।
প্রশান্ত বাবু আরো একটা কথা জানিয়েছিলেন আমার প্রশ্নের ( " এদের কৃত্রিম বংশ বিস্তার বা captive breeding করা যায় কি" বা "দেশী গাধার সাথে cross করে অনেক শক্তিশালী প্রজাতি তৈরী সম্ভব কি") উত্তরে,
" ওদের লিটল রনের বাইরে নিয়ে গেলে বাঁচে না" ,কারন ওরা নি:শ্বাস এর সাথে লবণাক্ত হওয়া শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় বিশেষ কাজে লাগায়.
একবার চেষ্টা করা হয়েছিল,কিন্তু, ২-৩ মাস পরে ওরা মারা যায়।
একদম ঠিক বলেছেন ॥
মুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
উত্তরমুছুনDarun picture and verynice writing.
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ ।
মুছুনলেখাটি পড়লাম এক কথায় অসাধরন একটি লেখা । অনেক কিছু জানতে পারলাম ।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনঅনেক ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনলেখাটা আসাধারন বললে কম বলা হয়....।
উত্তরমুছুনআপনি আমার শুভেচ্ছা নেবেন ।
মুছুনখুব সুন্দর লাগল লেখাটি। একবার অন্তত যেতেই হবে।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।ধন্যবাদ ॥
মুছুনKhub sundar laglo Dada. Darun Upasthapana.
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে।
মুছুনKhub sundr
উত্তরমুছুন