সুন্দরবন
বনের মধ্যে লুকানো বন সুন্দরবন
বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় ।
' মেঘলা দিনে দুপুরবেলা যেই পড়েছে মনে
চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে ...
আমি কাছে গেলাম, পাশে বসলাম,মুখে বললামঃ খা
আঁখির আঠায় জড়িয়েছে বাঘ ,নড়ে বসছে না । '
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বাঘ কবিতাটা পড়ে যাই সুন্দরবন যাবার আগে । ভাবি এবার তার দেখা পাবো । কিন্তু মা বনবিবির ইচ্ছে না থাকলে তো আর দেখা পাওয়া যায় না! বাঘ কিন্তু দেখতে অসাধারণ। প্রকৃতির মাঝে তার অসাধারণ রূপটাকে দেখবার লোভ আমি সামলাতে পারিনা। সুন্দরবনের বাঘকে আমি নদীতে সাঁতার কাটতে দেখেছি। জঙ্গলের মধ্যে বসে থাকা অবস্থায় আমি দেখিনি
পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র সুন্দরবনের বাঘই মানুষকে খায় । সুন্দরবনের বাঘকে বলা হয় inborn man eater tiger। সুন্দরবনের এখন বাঘের সংখ্যা ৯৬। মনে করা হয়, সাইবেরীয় বাঘের পর বেঙ্গল টাইগার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপপ্রজাতি। আমরা যখনই সুন্দরবনে যাই , অবচেতন মন বলে বাঘ দেখতে যাচ্ছি। সুন্দরবন কি শুধু বাঘ দেখার জায়গা? কী নেই সুন্দর বনে ।
সুন্দরবন |
যখন প্রথম সুন্দরবন যাই তখন সমস্ত লঞ্চ ছাড়তো ক্যানিং থেকে। লঞ্চ মালিকরা জোয়ারের সময় সমস্ত লঞ্চ ঘাটের কাছে এনে রাখতেন । দল বেঁধে মেয়েরা তখন কলসি করে খাবারের জল, রান্নার জল লঞ্চে তুলে দিত। আমরা আগের দিন চলে যেতাম, সমস্ত দোকান বাজার সব করে লঞ্চে তুলে নিতাম । লঞ্চে ব্যাগ রেখে আমরা বাজার দোকান করতে এসেছি। সন্ধ্যেবেলা ঘাটের কাছে গিয়ে দেখি আমাদের লঞ্চ আর নেই। নিকষ অন্ধকারে না দেখতে পাচ্ছি লঞ্চ না দেখতে পাচ্ছি জল । অনেক ডাকাডাকির পর আমাদের রাঁধুনির সাড়া মিলল। সে কী লঞ্চ তো অনেক দূরে সামনে জল নেই, যাব কী করে সঙ্গে এতো বাজার ? লঞ্চে যেতে না পারলে সারারাত এই খালের ধারে বসে থাকতে হবে । শেষ পর্যন্ত থকথকে কাদা জলে নেমে পড়লাম। যত যাচ্ছি তত ডুবে যাচ্ছি কাদার মধ্যে । আরে এ তো গঙ্গা মাটি মেখে গঙ্গায় স্নান! আমার মনে হয় জয়যাত্রায় জয় তিলক আমার কপালে নেই !
এরকম লঞ্চ নিয়ে ভ্রমণ |
জল কী তোমার কোন ভাষা বোঝে ? তবে কেন তবে কেন জলের উপর ভেসে থাকো ? আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমি দু-দণ্ড শান্তি পেয়েছিলাম সুন্দরবনের হরিণের চোখে । বা জীবনানন্দকে ভালোই কাজে লাগলাম মনে মনে এই ভাবি আর চলতে থাকি জলে ভেসে । সবুজ টলটলে জল , দু একটা হলুদ পাতা ভেসে যাচ্ছে জলে । স্টিমারের শব্দ, কোথাও কি চোখে পড়ছে কুমিরের ভেসে ওঠা? সুন্দরবনের সুন্দরী গাছেরা মাথা নাড়িয়ে আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে । পায়ের নিচে নড়বড়ে শেকড় তবুও তাদের আহবানে এতোটুকু ক্ষান্তি নেই। কত অচেনা পাখি তারা নিজের ছন্দে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছি এ গাছে থেকে ও গাছ ।
আজ পর্যন্ত জানা প্রায় ৫০টি প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে কেবল সুন্দরবনেই আছে ৩৫টি প্রজাতি। অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ চিরসবুজ, খাটো, গুল্মজাতীয় অথবা লম্বা বৃক্ষজাতীয়। এদের অনেকেই বনের তলদেশ খালি না রেখে সাধারণত দলবদ্ধভাবে জন্মায়।
কুমির |
এখানে প্রকৃতিকে কেউ সাজিয়ে দেয়নি প্রকৃতি সেজেছে তার আপন ছন্দে। এইতো এইমাত্র দেখলাম চারটে হরিণ পা উচিয়ে গাছের পাতা খাচ্ছে। সবাই বলে ' খালি ' দেখতে যাচ্ছো ? খালি তো খাল । হয়তো আবদুন মাঝি তার ছিপ নৌকা নিয়ে এখনি চলে আসবে খালি তে ! সুধন্য খালি, সজনেখালি, পিরখালি ,গাজীখালী, ঝাড়খালী, কত খালির নাম বলবো। সব খালিতেই যাবো । থাকবো শুধু পাখিরালয়ে রাতের বেলা ।
গতবছর গিয়েছিলুম ইলিশ উৎসবে। সকাল থেকে টিপটিপ করে ইলশেগুঁড়িমতো বৃষ্টি পরছে। একটা চাপা গরম মিনমিন করে ঘাম হচ্ছে। আমাদের জাহাজের সারেং বলল দাদা আজকে কিন্তু খুব বৃষ্টি হবে। আমি বললাম ঝড় হবে না তো ? সারেং বলল এই সময় ঝড় হয় না বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হবে। গদখালি থেকে লঞ্চ আমাদের ছেড়ে দিলো । কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম আকাশের একটা কালো রূপ। এ তো সেই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! আকাশের বুকে ম্যাজিক মনসুন ! কাল আকাশ, সবুজ পাতা, নীল জল আর কী চাই ? কেন আমি গোয়ায় যাব ম্যাজিক মনসুন দেখতে? চা কফির সাথে গরম গরম ভাজা মাছ এসে গেছে। আমি মাছ খাই না । সেই জন্য ওদিকে আমার কোন লোভ নেই । আমি জানি এই উৎসবে দুবেলা ইলিশ মাছ থাকবে । সেই জন্য তৈরি হয়েই এসেছিলাম । লঞ্চের হেডকুক আমায় ডেকে বললেন, দাদা ইলিশ উৎসব এসেছেন আর কী না মাছ খাবেন না? শুধু ইলিশ কেন আরো তো খাবার আছে, সেটা দিয়ে খেয়ে নেবো ।
নদীতে |
পাখি যতই উড়ুক সন্ধ্যেবেলায় সে বাসায় ফিরে। সেই আশায় পাখিরালয়ের গাছের মাথায় মাথায় খুঁজে বেড়াচ্ছি পাখিদের। সত্যিই সার্থক নাম পাখিরালয়। কত পাখির শব্দ কত রকম পাখি দেখলাম। মন ভরে গেলো ।
জলই জীবন |
দুটো রাতি থাকতে হবে পাখিরালয়ে । পাখি দেখার নেশায় বুঁদ হয়ে গেলাম। সত্যি কথা বলতে কি আমি বাঘ দেখার আশায় সুন্দর বনে আসেনি । ওয়াচ টাওয়ারে উঠে বাঘ দেখবার ইচ্ছেও আমার নেই। দুদিন আমি জলে ভাসবো আর প্রকৃতি দেখব। সুন্দরবনই ভারতের একমাত্র জায়গা, যেখানে নদীতে মৎস্যজীবী মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নৌকোয় মাছ ধরতে যায়। ভেবেছি এদের সাথে বেড়িয়ে পড়ি । পারি কোথায় ? পিছুটান যে বড় জিনিস । কোথায যাবো ? আবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ফিরে আসতে হয় বাড়িতেই। পূজা-পার্বণ ধর্ম আমায় ভেতর থেকে নাড়া দেয় না । মানুষই সব । মা বনবিবির মন্দির দেখার ইচ্ছে আমার নেই । আমি ভাবি কেন পরবো না ওদের সাথে মধু ভাঙতে যেতে ? পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। সুন্দরবনও তাই । জীবনের তিনভাগ দুঃখ একভাগ সুখ । এই সুখ নিয়ে আবার আসবো সুন্দরবনে ।
Nice
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন🌹❣️❣️❣️🌹
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনখুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ ॥
মুছুনখুব সুন্দর। লেখাটা আরো ভালো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে ।
মুছুনদেখার চোখ এরেই কয় ! সাধারণ নয়। বাহ্
উত্তরমুছুন! !
ধন্যবাদ॥
মুছুনমন উদাস করে দেওয়া সুন্দরের ডাক বুকের ভেতর সমানে তুলতে থাকে বিদ্যা,মাতলা,রায়মঙ্গলের ঢেউ। চোখের ওপর ভেসে ওঠে দুধ সাদা বাধা মেলা বক,ভাসমান কুমীর আর লাল কাঁকড়ার চলনপথ।বামাদাকে অনেক ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনসোমনাথ বসু
নৈহাটি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা
মুছুনখুব সুন্দর লেখা ও ছবি।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক শুভেচ্ছা।
মুছুনখুব সুন্দর ,সুন্দরবন মানেই যে রয়েল বেঙ্গলের দর্শন।এই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে।লেখনীতে সুন্দর ছবি আকাঁ এ আমার কাছে পরম প্রাপ্তি।
উত্তরমুছুনভালো থাকবেন । অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
মুছুনDarun laglo
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনআপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানাই। শুভ নববর্ষ আগত প্রায়। সুন্দরবনের ওপর লেখাটি ভালো হয়েছে। দীর্ঘ কাল সুন্দরবনে ছিলাম, গভীর জঙ্গলে রাতে আকাশের ছায়াপথ হাতের কাছে চলে আসতো, সে এক অতুলনীয় দৃশ্য মা ভোলার নয়।
উত্তরমুছুনলেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ॥
মুছুনDarun
উত্তরমুছুনThanks
মুছুনখুব সুন্দর লেখা ।
উত্তরমুছুনThanks
মুছুনKhub sundor lekha r thanks amai lekha ta patanor jonno🙏.pore khub bhalo laglo
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে।
মুছুনদাদা সুন্দর বন নিয়ে সুন্দর লেখা।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক ধন্যবাদ
মুছুনঅন্য আরো লেখাগুলোর মতোই এটাও বেশ লাগলো... আরো একবার সুন্দরবন ঘোরার ইচ্ছাডানা মেললো..
উত্তরমুছুনলেখাটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনশুভেচ্ছা গ্রহণ করুন
মুছুনKhub bhlo
উত্তরমুছুন