পোস্টগুলি

দারিং বাড়ির পথে

ছবি
  দারিং বাড়ির পথে  বামপদ গঙ্গোপাধ্যায় । দারিংবাড়ি যাচ্ছ আমার জন্য কি আনবে ? বড় কঠিন প্রশ্ন । কি আনব ? অনেকক্ষণ ভেবে বন্যকে বলেছিলাম তোমার জন্য পাহাড় আনব । সত্যিই  যদি একটা ভালো পাহাড় পাই , তাকে আমি উপহার দেব । রূপনারায়ন নদী যদি রুপাকে দিতে পারে হিমু, আমি কেন পাহাড় দিতে পারব না বন্যকে?  উপহারের কথাটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম । উড়িষ্যার ব্রহ্মপুর রেলস্টেশনে নেমে প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়ে যায় । ভাবি যাচ্ছি যখন দারিংবাড়ি তাহলে একটা সুন্দর পাহাড় তো আমি পাবই । এবার আমার চোখ থাকবে পাহাড় পানে ।   সুরাডা  হিঞ্জিলিকাট হঠাৎ একটা শব্দ হলো । আমাদের গাড়িটা একটু সাইড করে দাঁড়ালো । চালককে জিজ্ঞেস করি কি হলো ? গাড়ির মাথা থেকে মনে হয় ব্যাগ পরে গেল। বলেই সে দড়ি দিয়ে ব্যাগ বাধার জন্য গাড়ির মাথায় উঠে পরল । আমিও নেমে পড়ি গাড়ি থেকে । বুঝতে পারছিনা জায়গাটা কোথায় । যাচ্ছি দারিংবাড়ি দিকে । বেহরামপুর থেকে  অনেকটাই এসে পড়েছি । জায়গাটার নাম খোঁজার চেষ্টা করছি । উড়িষ্যায় এসে তো  আর বাংলা আশা করা যায় না? ইংরেজি খুঁজে খুঁজতে থাকি । লোককে জিজ্ঞেস করি জায়গাটার নাম কি ? একটি লোক বেশি অবাক পানে আমার

রাণী কী ভাভ

ছবি
রাণী কী ভাভ বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায়  "জনহীন প্রান্তরে প্রাকার ঘেরা দেবদেউল। মন্দিরের গায়ে মসৃণ স্তম্ভের আশেপাশে দিনের আলো, চাঁদের সুষমা মেখে দাঁড়িয়ে আছে তারা। দেবতা আছেন মন্দিরে, মন্দিরের বাইরে যৌবন সৌন্দর্যের অনন্ত সম্ভার। সুঠাম তনুদেহে লাবণ্যের জোয়ার। পীনোন্নত বক্ষে স্বচ্ছ উত্তরীয় হয়ত আছে, দেখা যায় না। প্রলম্বিত মুক্তোর মালাটি স্তন স্পর্শ করে লুটিয়ে পড়েছে সুগভীর নাভির ওপরে। বলয়-কাঁকন শোভিত মৃণাল বাহুদুটি দু কেউ রেখেছে সুবিন্যস্তভাবে, কেউ মালার মতো জড়িয়ে ধরতে চায় প্রিয়তমকে, কারোর হাতে দর্পণ কারোর হাতে পাখি, কারো বা করাঙ্গুলে ব্যঞ্জনাময় মুদ্রা। ক্ষীণ কটির তটে কারুকার্য করা চন্দ্রহার। নীবির বাঁধন শিথিল হয়ে গুরু শ্রোণীদেশ ঘিরে অধোবাস নেমে এসেছে নিটোল উরুর সীমা ছাড়িয়ে অচঞ্চল চরণপ্রান্তে। স্থির হলেও তাদের পায়ের নৃত্যের ভঙ্গি বিভ্রম ঘটাতে চায় । এখনি বুঝি ছন্দে তালে বেজে উঠবে নূপুর, অঙ্গে ফুটে উঠবে নতুন ভঙ্গি। সূক্ষ্ম বস্ত্রের ভাঁজেভাঁজে ফুটে উঠবে ইঙ্গিতময় দুটি চারটি রেখা । শুধু কি ঐ ভঙ্গিটুকু ? কাছে গেলেই চোখে পড়ে অপরূপ ছাদের কমনীয় মুখে যৌবনশ্রী । "  প্রতিটি স্

মধেরার সূর্য মন্দির

ছবি
মধেরার সূর্য মন্দির । বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় ।  মধেরার সূর্য মন্দির লেখার আগে আমি একবার পুরানের পথে হাঁটবো । যে পথটা দ্বারকার দিকে গেছে । মনুর কাল হিসাবে যদি বলি। হিসেবের কাল-বিন্দু আছে, সেটা যীশুর জন্মকাল, তাহলে পুরাণের কি কোন কাল-বিন্দু নেই? নেই। কিন্তু আদিবিন্দু আছে, সেটাকে বলা হচ্ছে মানব কল্পের আদিবিন্দু। স্বয়ম্ভর মনুকাল, পাঁচ হাজার ন’শো আটান্ন খ্রিষ্টপূর্ব। এই আদিবিন্দুর অতীতে আর কিছু নেই, থাকলেও তা ইতিবৃত্তে আসেনি। সেই সময় দ্বারকা কেমন ছিল আমি ধারনা করতে পারি না। হয়তো সোনায় মোড়া ছিল। যাই থাক শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন । ছিলেন শাম্ব।   শাম্ব হল শ্রীকৃষ্ণের পুত্র। পুরাণ মতে, শাম্ব পিতা কৃষ্ণের চেয়ে কোনো অংশেই কম রূপবান ছিলেন না । কাঞ্চনের চেয়ে  অধিক উজ্জ্বল বর্ণে পারিপার্শ্বিক সবকিছুই যেন প্রতিবিম্বিত হয়। তা সে কানন, কুঞ্জ, জলাশয়, আকাশ, পর্বত, নারী যাই হোক। তার আয়ত চোখে সবসময়  কামনার বহ্নি অনল প্রজ্বলিত হয় না, কিন্তু তার মুগ্ধ দৃষ্টিতে এমন চিত্ত জয়ী দুর্বার আকর্ষণ আছে, রমণী মাত্রই তার দর্শনে মিলন আকাঙ্ক্ষায় কাতর হয়ে উঠে। একদিন নারদ উপস্থিত হলেন দ্বারকায় । সেই সময় তিনি দেখলেন বর্ণাঢ্য ফু

ছবিমুড়া ত্রিপুরার আমাজন

ছবি
ছবিমুড়া_ত্রিপুরার_আমাজন  বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায়  আগের দিন ঊনকোটি থেকে ফেরার সময় রাত হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় কুয়াশা ঢাকা গভীর জঙ্গলের  গাছগুলো মাথা নুইয়ে ছিল রাস্তার দুই ধারে। এই পচা মে মাসে এমন কুয়াশা দেখে যেমন আনন্দ হচ্ছিলো তেমনি ভয়ও ছিল মনে। বৃষ্টিতে লাল কাদামাটি জড়িয়ে যাচ্ছিল গাড়ির চাকায়। তার ওপরে নিকষ অন্ধকার।আমাদের মাথায় কখন যে কুয়াশা ঢুকে পড়েছে আমরা নিজেরাও জানিনা। কাল আমরা যাব ছবিমুড়া। সোমনাথদা হন হন করে হেঁটে যাচ্ছেন চায়ের খোঁজে। আমি তার পেছনে পেছনে যাচ্ছি। হোটেল থেকে জানিয়ে দিয়েছে সকাল আটটার আগে চা হবে না। ত্রিপুরায় সকাল হয় একটু দেরিতে। দোকানপাট নটার আগে খোলে না। আর রাত আটটা হলে নিস্তব্ধতার আঁকি-বুকি। তাকে পেলে বাড়ি যাবো। সেরকমই চা পেলে তবেই ছবিমুড়া যাব। সবাই রাগারাগি করছেন , দেরি হয়ে যাচ্ছে দেরি হয়ে যাচ্ছে। সোমনাথ দা বলে এই তো হয়ে গেছে চলুন। ভাবি কিসের দেরি? আমরা তো দেরি করার জন্যই বাড়ি থেকে বেরিয়েছি ! ছবিমুড়া নামটার সাথে একটি শিল্প জড়িয়ে আছে। নামটা শুনলেই একটা ছবি ছবি ভাব মাথার ভিতরে হোঁচট খায়। কোন ছবিওলা মানুষ ওখানে নেই তো? ক্লান্ত অলস অবসর। সোজা বা

পালিতানা

ছবি
  মন্দিরের শহর পালিতানা বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায় পালিতানাকে বলা হয় পশ্চিমের কাশী। কাশীর পর পালিতানাই নাকি একমাত্র শহর যেখানে সবচেয়ে বেশি মন্দির আছে। ভাবনগর থেকে ৫৬ কি.মি. দূরে। আমরা গেছিলাম লোথাল থেকে। লোথাল থেকে যে বাস ধান্দুকা, ভিল্লাভিপুর হয়ে আসছে সেই বাসে। পালিতানা যাবার ২৩ কি.মি. আগে শ্রীহরে বাসটি থেমে গেল। অনেকটা পাহাড়ি শহরের আদল। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা ফোর্টের অংশ। আর টিলার মাথায় মন্দির। বেশিরভাগ মন্দিরই জৈন মন্দির। শ্রীহর থেকে আর ৮ কি.মি. দূরে শোননগর। শোননগরেও রয়েছে জৈন মন্দির।পালিতানা যাবার রাস্তার দুপাশে তৈরি হচ্ছে আরও নতুন জৈন মন্দির। পালিতানা বাসস্টেশনে এলেই বোঝা যায় জৈন শহরে এসেছি। বড় বাসস্টেশনের মাথায় রয়েছে মহাবীর জৈনের একটি ফ্রেস্কোর কাজ। অপূর্ব কাজ। গুজরাটের বিভিন্ন বড় বাসস্টেশনগুলিতে রয়েছে বড় বড় ম্যুরালের কাজ। পালিতানা শহর থেকে শত্রুঞ্জয় পাহাড়ের দূরত্ব প্রায় চার কি.মি.। শহর থেকে টাঙ্গা বা অটো যাচ্ছে । শত্রুক্ষয় পাহাড়কে ঘিরে রেখেছে শত্রুঞ্জয় নদী। পাহাড়ের মাথায় রয়েছে অসংখ্য জৈন মন্দির। মন্দির শুরু হয় পাহাড়ের কোল থেকেই। জৈন তীর্থের মধ্যে  এটি ৫ট

লোথাল

ছবি
মৃত নগরী লোথাল  বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায়  "আমেদাবাদ জেলায় শেষপ্রান্তের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম লোথাল। গ্রামের মানুষ এখনও বিশ্বাস করে এটি মৃতদের গ্রাম। গুজরাটি ভাষায় লোথাল মানে মৃত্যু। এই লোথ থেকেই এসেছে লোথাল। চারদিকে বাবলা গাছের জঙ্গল। জঙ্গলের মাঝে সরু কালো ফিতের মতো রাস্তা গিয়ে মিশেছে মৃতনগরী লোথালে। আমেদাবাদ শহর থেকে ৮০ কি.মি. দূরে। কাল ৭-১৫ মিনিটে আমেদাবাদ গীতামন্দির বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছেড়ে পৌনে দশটায় পৌঁছে গেলাম লোথাল। কাছাকাছি মানুষজন নেই। তবে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার পর মানুষ জন আসতে শুরু করেছে এখানে।  বাস রাস্তার পাশে একটি ইংরিজিতে বোর্ড লাগানো 'লোথাল যাবার রাস্তা’। মিনিট কয়েক হাঁটার পর চোখে পড়ে খননকার্যের স্থান। ইতিহাস বলে হরপ্পা সভ্যতার আয়তন ছিল ১৩ লক্ষ বর্গ কি.মি.। পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্থান, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে এই সভ্যতা। তার মধ্যে ছয়টি নগরের সন্ধান পাওয়া গেছে। মহেন-জো-দরো, হরপ্পা, চানহুদারো, লোথাল, বনওয়ালি, কালিবঙ্গান। প্রথম তিনটি পাকিস্তানে, হরিয়ানায় বনওয়ালি, রাজস্থানে কালিবঙ্গা

দিউ

ছবি
  দিউ   বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমনাথ থেকে বেড়িয়ে দিউ এর দিকে যাচ্ছি। আমার এক  সহযাত্রী গাড়ির জানালা দিয়ে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন ওই দেখুন পাঁচ মাথা তাল গাছ। আমি ওনাকে কিছুতেই বোঝতে পারছি না ওটা তাল গাছ নয়। এই গাছ গুলো তাল গাছের মতো দেখতে হলেও এদের নাম হোকা। এই ধরনের গাছ আফ্রিকা থেকে এসেছে । পর্তুগিজরা এই গাছ এখানে লাগিয়েছিলেন । পরে ভুল ভাঙল দিউ এসে।  পাঁচ মাথা গাছ সমুদ্রে ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ দিউ। গুজরাট থেকে একে আলাদা করে চিহ্নিত করা খুবই মুশকিল। গুজরাটের মানচিত্রের নিচে এর অবস্থান। দিউ নামটি একা উচ্চারণ হয় না সঙ্গে যুক্ত হয় গোয়া-দমন। গোয়া যেমন পর্যটকদের কাছে খুবই চেনা নাম দিউ ততটাই অপরিচিত। গোয়া এবং দিউ-র পার্থক্য খুবই সামান্য। পার্থক্য অবস্থানের আর আয়তনের ৷ দিউ-র সী বিচে গোয়ার মতো মানুষ নেই, তবে রঙিন হয়ে আছে নাগোয়া বিচ । স্পিডবোর্ড চলছে । ওয়াটার স্কুটার চলছে । থাইল্যান্ডের ফুকেট এর মত সমুদ্রের মাঝে অস্থায়ী জেটি বানিয়ে  প্যারাসুট রাইডিং করাচ্ছে । শান্ত সী বিচে রয়েছে এক অনাবিল আনন্দ। প্রকৃতি একে নিজের মতো সাজিয়ে তুলেছেন। একদিকে নীল-শাদা সমুদ্রের জল আছড়ে পড়ছে পশ্চিমে, পূর্বদ